নীলফামারীতে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিতর্কিত মন্তব্য করে প্রতিবাদের মুখে ক্ষমা চেয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. সাইফুল ইসলাম। রোববার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

সভায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কান্তিভুষণ কুন্ডু অভিযোগ করেন, ‘নীলফামারীতে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে টিউবওয়েলের হেড (হাতলসহ মাথা) চুরি হচ্ছে। মাদকাসক্তদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ওসি মামলা নেন না। মাদকাসক্তরা এসব চুরিতে জড়িত।’

এর বিপরীতে সভায় উপস্থিত পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের মানুষের মানসিকতা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, আজ তারা কপালের টিপ নিয়ে হইচই করে। আর চুরি তো বাড়তেই পারে। দিন দিন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে টিউবওয়েলের হেড চুরি হতেই পারে।’

তাৎক্ষণিক এসব কথার প্রতিবাদ করেন ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, সৈয়দপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. শাহিন আলম। ধীরে ধীরে সভায় উপস্থিত অন্য সদস্যরাও প্রতিবাদ করতে থাকেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম ক্ষমা চান।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর্জা মুরাদ হাসান বেগ, পৌর মেয়র ও জেলা আ.লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, জলঢাকা পৌর মেয়র ইলিয়াছ হোসেন, ডিমলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম, রেলওয়ে পুলিশের সার্কেল কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার, ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর ই আলম সিদ্দিকী প্রমুখ।

সভার বিষয়ে জানতে চাইলে নীলফামারী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ বলেন, ‘একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। দ্রব্যমূল্য বাড়ার বিষয়ে তিনি বলতে পারেন না। আর মাদকের সঙ্গে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি নিজের দায় এড়াতে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। আর টিপ নিয়ে সভায় কোনো সদস্যই কথা বলেননি।’

অভিযোগ অস্বীকার করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ও রকম কোনো কথা হয়নি, মানুষের নৈতিকতা স্খলনের কথা হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে কোনো কথা বলিনি। আমি বলেছি রডের দাম বৃদ্ধির কথা। রডের দাম বৃদ্ধির কারণে টিউবওয়েলের হেড চুরি যাওয়ার কথা বলেছি।’

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বলেন ‘আমি ওই সভায় উপস্থিত ছিলাম না। এ কারণে এ মুহূর্তে না জেনে কিছু বলতে পারব না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, ‘সব জিনিসের দাম বেশি এটা ঠিক নয়। বিতর্ক তৈরি করে এমন কোনো কথা সরকারি পর্যায়ে না বলাই ভালো। যদিও পরে তিনি ওই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।’

শরিফুল ইসলাম/আরএইচ