সদ্যোজাত ছানার মুখে খাবার দিচ্ছিল না মা কবুতর। অনাহারে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল ছানা কবুতরের। তা দেখে অভিনব এক কায়দা বের করেন স্কুলপড়ুয়া এক কিশোরী। নিজের মুখে পাখির খাবার নিয়ে ধরলেন ছানা কবুতরের ঠোঁটের সামনে। সঙ্গে সঙ্গে তার মুখের ভেতর থেকে খাবার খেতে থাকে ছানাটি।

একটি কবুতরের জীবন বাঁচাতে ব্যতিক্রমী এমন পন্থা যেন ভালোবাসার এক অনন্য নজির। গভীর মমত্ববোধ থেকেই এ প্রাণান্তকর চেষ্টা। পরিবেশ দূষণে যেখানে অনেক পাখি এখন বিপন্ন, সেখানে এমন ঘটনা খুবই বিরল।

ময়মনসিংহ নগরীর আর কে মিশন রোড এলাকায় রেলওয়ে লোকমাস্টার শাহ মো. এনায়েত হোসেন খানের বাসায় এমনই ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সাল থেকে তার স্ত্রী মেহেরুন নেসা ও মেয়ে আদিবা রহমান হেমা কবুতর পালন শুরু করেন। বর্তমানে তাদের বাসায় ছয় প্রজাতির ১৭ জোড়া কবুতর রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য আরও পাখি। মা-মেয়ে মিলে পরম যত্নে লালন পালন করছেন এসব প্রাণী।

ছানা কবুতরের প্রাণ বাঁচাতে অভিনব এমন পদ্ধতির বিষয়ে জানতে চাইলে আদিবা রহমান হেমা বলেন, ‘ঝর্না শার্টিন প্রজাতির এক জোড়া কবুতর ১৬ দিন আগে দুইটা ছানার জন্ম দেয়। হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করলাম, একটি ছানা বেশ ছোট ও দুর্বল। বাবা-মায়ের কাছ থেকে খাবার না পাওয়ার কারণে এমন অবস্থা হয়েছিল। তারপর মা কবুতর যেভাবে খাওয়ায় সেভাবে খাওয়ানোর চিন্তা করি। আমার মুখে খাবার নিয়ে তা চিবিয়ে তার মুখের কাছে ধরলে সে খাবার গ্রহণ করতে পারে।’

নিজের মুখ থেকে ছানা কবুতরের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে কিশোরী হেমা

হেমা আরও বলেন, ‘কোনো প্রাণী মারা গেলে আমার খুবই কষ্ট হয়। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে বাবা-মা ছানাকে খাওয়ায় না। তখন ড্রপার দিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় আমি মুখে খাবার নিয়ে তাদের মায়ের মতো খাওয়ানোর চেষ্টা করি। এভাবে তারা অনায়াসে খাবার নিয়ে খেতে পারে।’

হেমার মা মেহেরুন নেসা বলেন,‘অনেক সময় দেখা যায় দুটি ছানার মধ্যে যেটি আগে ফোটে তাকে খাওয়ানো নিয়েই বাবা-মা ব্যস্ত থাকে। পরে যে ছানা ফোটে তাকে একটু কম খাওয়ায় আবার অনেক সময় খাওয়ায় না। এতে করে একটি ছানা বড় থাকে অন্যটি ছোট থাকে। পরবর্তীতে খাওয়ানোর সময় বড় ছানাটি তার ঠোঁট আগে বের করে এবং সব খাবার খেয়ে নেয়। ছোট ছানাটি আর খেতে পারে না। তখন আমরা তাকে বের করে নিয়ে নিজেরা খাওয়ানোর চেষ্টা করি।’

একটি পাখির প্রাণ বাঁচাতে এমন উদ্যোগ জানান দেয় প্রাণ-প্রকৃতি টিকিয়ে রাখতে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। দায়িত্ব না এড়িয়ে বিপদগ্রস্থের পাশে দাঁড়াতে হবে। কেননা এই প্রাণ-প্রকৃতিই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে রাখে।

এসপি