চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত কয়েকদিনের তীব্র তাপদাহে হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যাই বেশি। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে রোগী বেশি হওয়ায় সিংহভাগ রোগীই চিকিৎসা নিচ্ছেন মেঝেতে। গত কয়েকদিন থেকে প্রচণ্ড গরমের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। 

মেঝেতে থাকা রোগীরা অত্যধিক গরম ও মশার কারণে রয়েছে বাড়তি ভোগান্তিতে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে প্রতিদিন ২০-৩০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। তবে মহিলা রোগীর সংখ্যাও গত মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) থেকে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের নার্সরা। 

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সুপারভাইজার সিনিয়র স্টাফ নার্স নুসেফাত বেগম ঢাকা পোস্টকে জানান, বুধবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যার সময় ২৯ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিল। মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৬ জন নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ২৮ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছে।

তিনি আরও জানান, জেলা হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা ১২টি। তবে গত কয়েকদিন ধরে বেডের তুলনায় ৩-৫ গুন বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই রোগীদেরকে মেঝেতে ও বারান্দায় চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যাই বেশি। 

রাজশাহীর তানোর উপজেলার জুমারপাড়া গ্রামের দিনমজুর এহসান হাবীব (৩২) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি জানান, হঠাৎ আমি ও আমার স্ত্রী দুইজনেরই ডায়রিয়া হয়েছে। পরে আজকে (বুধবার) রাত ৩টার দিকে দুইজনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। আমি জায়গা পেলেও আমার স্ত্রী মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সদর উপজেলার চকআলমপুর মেলারমোড় এলাকার মৃত সাবজাল আলীর স্ত্রী পারুল বেগম অসুস্থ নাতনিকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি বলেন, গত পরশু থেকে আমার নাতনির ডায়রিয়া হয়েছে। পরে কালকে অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে গেলে বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখনো অবস্থা খুব একটা ভালো না। হাসপাতাল থেকে শুধু স্যালাইন দিচ্ছে, ওষুধ দেয় না। বেডে জায়গা না পেয়ে নিচেই চিকিৎসা করাচ্ছি। 

নাচোলের দোগাছি হাঁপানিয়া গ্রামের হাকিম আলীর স্ত্রী সুলেখা খাতুন তার মেয়ে মুন্নি খাতুনকে (৮) নিয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। সুলেখা জানান, গত শনিবার থেকে আমার মেয়ের ডায়রিয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ১১টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। চিকিৎসা ভালোই চলছে। কিন্তু অত্যধিক গরম ও মশার যন্ত্রণা। বারান্দায় একটা ফ্যান দিলে ভালো হয়। 

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজ রায়হান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অত্যধিক গরমের কারণে এই সময়ে শিশুরা ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। প্রত্যেক বছরের এই সময়ে এটা হয়ে থাকে। অত্যধিক গরমে ঘেমে যাওয়ার কারণে শিশুদের ডায়রিয়া হয়। এ কারণেই গত কয়েকদিন ধরে জেলা হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। 

তিনি আরও বলেন, এই সময়ে অভিভাবকদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং শিশুদের নিয়মিত গোসল করাতে হবে। গরমের কারণে খুব দ্রুত খাবার নষ্ট হয়ে যায়। তাই এসব খাবার শিশুদের দেওয়া যাবে না। আমরা দেখেছি শিশু অসুস্থ হলেই তাদের অভিভাবকরা ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে এসে খাওয়ান। অবস্থা গুরুতর হলে হাসপাতালে চিকিৎসা করতে নিয়ে আসেন। কোনোমতেই এটি করা যাবে না। শুধু মাত্র রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে শিশুদের। 

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শাহনাজ সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে হতে পারে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ, স্যালাইন ও চিকিৎসাসামগ্রী রয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা নেই। 

জাহাঙ্গীর আলম/আরআই