রাজবাড়ীর তিন এলাকায় পানিতে মিলেছে ডায়রিয়ার ব্যাকটেরিয়া
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে কয়েকদিন ধরেই ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। শয্যা সংখ্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি থাকায় হাসপাতালের মেঝে, গাছতলা ও ময়লার ড্রেনের পাশে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হঠাৎ কী কারণে রাজবাড়ী পৌর এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে তা জানতে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
বিজ্ঞাপন
এদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে পৌরসভার তিনটি এলাকার পানি পরীক্ষা করে তাতে ডায়রিয়ার ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে পানির কারণেই ওই সব এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
রাজবাড়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী পৌর এলাকার বিনোদপুর, ধুনচী ও লক্ষ্মীকোল এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি থাকায় ওই সব এলাকার পৌরসভার সাপ্লাই পানি ও জনসাধারণের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত নলকূপ থেকে নমুনা পানি সংগ্রহ করে তা ঢাকায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। পরীক্ষার রিপোর্টে পানিতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) এ জেলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে। এদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীতে নতুন করে ৫৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ১২ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ৩৬ জন। যা গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে কম। এছাড়াও পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১ জন, কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন,বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারজন ও গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অপরদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় সুস্থ্য হয়েছেন ৫৪ জন।
সরেজমিনে রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনে ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনের বাইরের দেওয়ালে পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার বসানোর কাজ চলছে। এছাড়াও রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১২ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ৩৬ জন রোগী। যা শয্যা সংখ্যার তিনগুণ। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে জায়গা না থাকায় রোগীদের হাসপাতালের বারান্দায় বেড পেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর স্বজনরা পাশে বসে আছেন।
রাজবাড়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাদিয়া ফেরদৌসী বলেন, রাজবাড়ী পৌর শহরের তিনটি এলাকা থেকে নমুনা পানি সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। পরীক্ষার রিপোর্টে পানিতে ডায়রিয়ার ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, নলকূপের গোড়া অপরিষ্কার ও নলকূপগুলো টয়লেটের কাছে থাকায় এমন হতে পারে। আবার সাপ্লাইয়ের পানির পাইপ দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায়ও ব্যাকটেরিয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মো. ইব্রাহিম টিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর বেশিরভাগই বিনোদপুর, ধুনচি ও লক্ষ্মীকোল এলাকার। কী কারণে ওই এলাকায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি তা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম। তবে তা আবারও বাড়তে পারে। এজন্য আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি পান করতে হবে। টয়লেট থেকে বের হয়ে ও খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। টয়লেটের কাছে টিউবওয়েল থাকলে তা সরিয়ে নিতে হবে। কারণ নলকূপ গুলো সাধারণত খুব একটা গভীর হয় না।
পানিতে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর জানতে পারব।
মীর সামসুজ্জামান/আরএআর