‘স্বামী মইরা যাওনের পরে এক পোলা লইয়া মাইনসের জমিতে ওরকাইত আছিলাম। চেয়ারম্যানের মাধ্যমে হাসিনা বিবি আমারেও একটা ঘর দিছে। আর মাইনসের জমিতে থাহন লাগবো না, এহন আমার নিজেরই একখান পাকা ঘর হইছে। হাসিনা বিবি ভালো থাকুক এই কামনা করি।’ 

ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নতুন পাকা ঘর পেয়ে কথাগুলো বলছিলেন ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হনুফা বেগম।

শুধু হনুফা বেগম নয় নতুন পাকা ঘর পেয়ে তৃতীয় লিঙ্গের সাথী বলেন, ‘আমরা সমাজে যাযাবরের মতো বাসবাস করি। নিজেদের স্থায়ী কোনো ঠিকানা নেই। বাড়িভাড়া নিতে গেলেও আমাদের কেউ ভাড়া দেয় না। এখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে ঈদ উপহার হিসেবে একটা পাকা বাড়ি দিছে। এতে আমি অনেক অনেক খুশি হইছি। আমার মতো ভোলায় আরও অনেক হিজড়া আছে তাদেরও কোনো থাকার নির্দিষ্ট স্থান নেই। আমি চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে তাদেরও মাথাগোঁজার ঠাঁই হোক।’

হারেছ মিয়া বলেন, ‘আমি জেলের কাজ করি। নদী ভাঙনে জমি, ঘরবাড়ি সব গেছে, এহন থাহি বেড়ির ওপরে। তাও এইবার নতুন বেড়ি আইয়া ঘর উঠাইয়া দিছে। এহন প্রধানমন্ত্রী আমারে টিউবয়েল, টয়লেটসহ পাকা ঘর দিছে। এহন বন্য তুফানেও ডর নাই।

এর আগে মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের মতো ভোলাতেও ভূমিহীন ও গৃহহীন ৭০১টি পরিবারকে পাকা ঘর প্রদানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর ভোলা সদর উপজেলা হল রুমে ‘ক’ শ্রেণির পর্যায়ে ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৩৯টি ও চরসামাইয়া ইউনিয়নে ১টি  ঘরের কাজ সম্পন্ন করে তালিকাভুক্ত পরিবারকে জমিসহ ঘরের রেজিস্ট্রার দলিল, নামজারির কাগজসহ ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন ভোলার জেলা প্রশাসক মো.তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। এছাড়াও জেলার ৬ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপকার ভোগীদের হাতে নতুন ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন।

এ সময় জেলা প্রশাসক মো.তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে ভোলা সদর উপজেলায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে ভোলায় ২০২২টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে মধ্যে ঈদের আগে জেলায় ৭০১টি ঘর নির্মাণ শেষে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরে আমরা ঘরের মালিকের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও চাবি হস্তান্তর করেছি। যার মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় ৪০টি, দৌলতখানে ১৭টি, বোরহানউদ্দিনে ২৭টি, লালমোহনে ১৫০টি, তজুমদ্দিনে ৪০টি, চরফ্যাশনে ১২০টি ও মনপুরায় ১১০টি ঘর দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পর্যায়ক্রমে বরাদ্দকৃত বাকি ঘরগুলো নির্মাণের পরে উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.ফরহাদ সরদার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর কাদের মজনু, সিভিল সার্জেন একে এম শফিকুজ্জামান, ভোলা সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম, ভোলা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলী সুজা প্রমুখ।

উল্লেখ, প্রতিটি ঘরের সঙ্গে রয়েছে বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, রান্নাঘর ও টয়লেটের ব্যবস্থা। তৃতীয় পর্যায়ে প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। 

ইমতিয়াজুর রহমান/আরএআর