স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগদান ও করোনাকালীন বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে কয়লাখনির প্রধান গেট খুলে দিয়ে শ্রমিকদের স্বাভাবিক চলাচলের অনুমতির দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন।

একই দাবিতে খনির অভ্যন্তরে কর্মরত ও বাইরে অবস্থানরত শ্রমিকরা একযোগে কর্মবিরতি ও আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। ফলে তিন দিন ধরে খনিতে কয়লা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। 

শ্রমিকরা জানান, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি কোম্পানিতে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে খনির সূচনালগ্ন থেকে প্রতিকূল পরিবেশে কয়লা উত্তোলন করছেন শ্রমিকরা। করোনাকালে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি লকডাউন ঘোষণা করলে তারা নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন। ওই সময় কিছু সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে কয়লা উত্তোলন চালু রাখা হয়। 

বর্তমানে সকল সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানিসহ উৎপাদনমুখী কোম্পানি শতভাগ শ্রমিক নিয়ে উৎপাদন চালু রেখেছে। কিন্তু বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ এক তৃতীয়াংশ শ্রমিক নিয়ে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে প্রায় ৭০০ জন শ্রমিক অদ্যবধি স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগদান করতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। 

সেই সঙ্গে প্রায় আট মাস যাবৎ করোনাকালীন বেতন-ভাতা না পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে জীবনযাপন করছেন শ্রমিকরা। ভেতরে কর্মরত প্রায় চারশ শ্রমিক অবরুদ্ধ জীবনযাপন করছেন। দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও খনি অভ্যন্তরে এখনও কঠোর বিধিনিষেধ জারি থাকায় তারা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে পারছেন না। অসুস্থ হলে সুচিকিৎসাও মিলছে না বলে অভিযোগ তাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, খনির অভ্যন্তরে তাদেরকে কারাগারের মতো বন্দী অবস্থায় রাখা হয়েছে। চলাচলের স্থানটিও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। নেই স্বাভাবিক চলাচলের স্বাধীনতা। স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ডিউটি করানো হচ্ছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সাতশ শ্রমিক দুই বছর ধরে বাইরে অবস্থান করছি। এখন তারা রোটেশনে কাজ দিতে চায়। কিন্তু আমাদের দাবি সকল শ্রমিককে কাজে যোগদান করাতে হবে। সেই সঙ্গে বকেয়া বেতন-ভাতা দিতে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির জেনারেল ম্যানেজার (খনি অপারেশন) মো. সাইফুল ইসলাম সরকার মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সমস্যা সমাধানে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। চীনা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন অনুপাতে শ্রমিকদের রোটেশনে কাজে নিতে চায়। কিন্তু বিধিনিষেধ শিথিল করা কিংবা চলাচল উন্মুক্ত করার ব্যাপারে তারা রাজি নয়। 

ইমরান আলী সোহাগ/আরএআর