কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে বাড়তি নিরাপত্তা দিতে জেলা পুলিশের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার ঘটনায় সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে এবার ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

তিনি জানান, দেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাতকে কেন্দ্র করে শুক্রবার থেকে কিশোরগঞ্জ শহরের আবাসিক হোটেল ও ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ তল্লাশি ও বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে। শুক্রবার থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে পুলিশের একটি অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। ওই ক্যাম্পের সদস্যরা ঈদগাহ ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছেন। এবার আগত লাখ লাখ মুসল্লির নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদগাহে মাস্ক, টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। মোবাইল ফোন ও ছাতা নিয়ে ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সুপার বলেন, ঈদগাহ ময়দানকে লক্ষ্য করে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মানুষ যখন ঈদগাহ ময়দানে আসবেন পুলিশের চারটি স্থাপনা পেরিয়ে আসতে হবে। সেটি চেকপোস্ট হোক বা পিকেট হোক। আবার কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে ছয়টি স্থাপনা পেরিয়ে ময়দানে আসতে হবে। এখানে ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে ছয়টি। তার মধ্যে র‌্যাব ব্যবহার করবে দুটি আর চারটি ব্যবহার করবে পুলিশ। মাঠে চারটি ড্রোন ক্যামেরা থাকবে। থাকবে মাইনো কোলারসহ ছয়টি ভিডিও ক্যামেরা। এছাড়াও পুরো মাঠ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। যা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। মাঠে প্রবেশ ও বাহির পথ নামাজের আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারে তাই আমাদের এই আয়োজন। 

এখানে ফায়ার সার্ভিস কাজ করবে। ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম থাকবে। পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম থাকবে। সুইপিং করা হবে। ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তায় বোমা শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয়করণের একটি দল ঢাকা থেকে শোলাকিয়া মাঠে মেটাল ডিটেক্টরের সাহায্যে বিশেষ অনুসন্ধান চালাবে। এছাড়াও মাঠের নিরাপত্তার জন্য পাঁচ প্লাটুন বিজিবি চাওয়া হয়েছে। র‌্যাব থাকবে। আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে। যাতে নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থেকে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারেন।

এছাড়া ২৮টি প্রবেশ পথে হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে নিরাপত্তা কর্মীরা আগত মুসল্লিদের দেহ তল্লাশি করে ঈদগাহে ঢোকার ব্যবস্থা করবে। ঈদের আগের দিন থেকে শহরে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখা হবে। এর পাশাপাশি পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাব সদস্যরা বিশেষ নজরদারি করবেন।

এবার শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ১৯৫তম ঈদুল ফিতরের ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠেয় এ জামাতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।

প্রসঙ্গত, ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। এ জঙ্গি হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। কিন্তু তারপরও ভাটা পড়েনি ঐতিহাসিক এ ঈদগাহ ময়দানের ঈদের জামাতে মুসল্লিদের সমাগমে। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি।

জনশ্রুতি আছে, শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ ঈদের জামাতের মোনাজাতে ভবিষ্যতে মাঠে মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করেন। অন্য একটি মতে, সেই দিনের সেই জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ লোক জমায়েত হন। ফলে ‘সোয়া লাখে’র অপভ্রংশ হয়ে ‘শোলাকিয়া’ নামটি চালু হয়ে যায়।

পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ (মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর) ঈদগাহের জন্য ৪ দশমিক ৩৫ একর জমি শোলাকিয়া ঈদগাহে ওয়াকফ করেন। এই মাঠে ২৬৫টি কাতার আছে, প্রতিটি কাতারে ৫০০ মুসল্লি নামাজের জন্য দাঁড়াতে পারেন।

এসকে রাসেল/আরএআর