অনুষ্ঠানের প্রধান ও বিশেষ অতিথি হতদরিদ্র তিন মা

একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। নানা রকম আয়োজন থাকে তার জন্য। কিন্তু লক্ষ্মীপুরে ঘটেছে উল্টোটা। একটি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন এক মমতাময়ী মা। বিশেষ অতিথি দুজনই অসহায় দুই মা। ভিক্ষা করে যারা সন্তানদের নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছেন।

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লক্ষ্মীপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত ‘মায়ের ভাষায় মাকে লিখি’ চিঠি লেখা প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ওই তিন মমতাময়ী মা অতিথি ছিলেন। তারাই ছিলেন অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ। ভিন্নধর্মী এ অনুষ্ঠানের আয়োজক ভাষার প্রদীপ ও মেঘ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ বিন বেলায়েত। এ সময় অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। পরে তাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা উপকরণ তুলে দেন আয়োজকরা।

বিশেষ অতিথি ববিতা রানী দাস। বয়স আনুমানিক ৩৬ বছর। এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ভিক্ষা করে জীবন চালাতেন তিনি। ভাষার প্রদীপের প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদের অনুপ্রেরণায় এখন তিনি ভিক্ষা করা কমিয়ে মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করছেন। শাক বিক্রি করে সংসার খরচ চালাচ্ছেন। তবু বিপদে পড়ে মাঝেমধ্যে তিনি ভিক্ষা করতে বাধ্য হন। ছেলেমেয়েকে ছেড়ে চলে গিয়ে তার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করেছেন।

অন্য বিশেষ অতিথি শিউলি আক্তার। তিনি লাহারকান্দি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। প্রায় ১২ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। এরপর থেকে এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে তার সংসার চলছে। ভিক্ষা করেও তিনি ছেলেমেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। তার মেয়ে একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

মেঘ ফাউন্ডেশনের সদস্য রিয়াদ হোসেনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ বিন বেলায়েত, সবুজ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাবু ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক রাজীব হোসেন রাজু, ইয়াসিন আরাফাত হৃদয় প্রমুখ।

ভাষার প্রদীপ ও মেঘ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ বিন বেলায়েত বলেন, আমরা স্বেচ্ছাসেবী। সমাজের অসহায় মানুষদের নিয়েই আমাদের কাজ। তাদের জন্য কাজ করে ইতিমধ্যে আমি জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়েছি। এ জন্য সমাজের অসহায় মানুষদের হাসি ফোটানোও আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সেই থেকেই আমি এ অনুষ্ঠানে তিনজন মমতাময়ী মাকে অতিথি করে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেছি।

মাকে না বলতে পারা কথাগুলো লিখে ছাত্রছাত্রীরা মাসব্যাপী ভাষার প্রদীপ সংগঠনের সমন্বয়কের কাছে চিঠিগুলো জমা দেন। তবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে কাগজ-কলম বিনামূল্যে দিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কার্যক্রমের আয়োজন করেন। পরে চিঠিগুলো পর্যালোচনা করে ১০০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

তবে এবার অফলাইন ও অনলাইনের মাধ্যমে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাকে না বলা কথাগুলো চিঠিতে লিখে ভাষার প্রদীপ ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/BhasharProdip/) মেসেজ বক্সে পাঠাতে হবে। তবে হাতে লিখে স্ক্যান করে পাঠাতে হবে। লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশ থেকে ছাত্রছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা এটি।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এনএ