প্রতিবন্ধীদের ক্ষমতায়ন করতে হলে আগে তাদের শিক্ষিত করা দরকার। কিন্তু শিক্ষিত করার জন্য দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এছাড়া এই অঞ্চলে কতজন প্রতিবন্ধী রয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। শুধু দক্ষিণাঞ্চলে নয় সারাদেশে প্রতিবন্ধীদের ডেটাবেজ করা উচিত। এরপর কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।

বুধবার (২৫ মে) বরিশাল বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারে আয়োজিত তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতা উন্নয়নে আইসিটি বিভাগ শীর্ষক সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল আয়োজিত এই সেমিনার সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে দুপুর ১টায় শেষ হয়। 

সেমিনারে প্রধান অতিথি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে শুধু সরকারি নয় বেসরকারিভাবেও এগিয়ে আসতে হবে। এটি সত্য কথা সমাজসেবা অধিদফতর ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ছাড়া তাদের নিয়ে সরকারের অন্য কোনো দপ্তর কাজ করছে না। বাংলাদেশ পুলিশ থানায় প্রতিবন্ধীদের সেবা দিতে ডেস্ক খুলেছে এভাবে অন্য সব দপ্তর এগিয়ে এলে প্রতিবন্ধীরা এগিয়ে যাবে। এছাড়া পরিপত্র জারি করে অন্য সকল দপ্তরকে অংশীজন করা উচিত। 

তিনি বলেন, দেশে মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ৬০ লাখের মত প্রতিবন্ধী রয়েছে। কিন্তু তাদের কোনো ডেটাবেজ নেই। দেশের প্রতিটি মানুষই কোনো না কোন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী। আর কল্যান রাষ্ট্রের ধারণাই হচ্ছে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা। সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে সরকার প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে যেভাবে প্রকল্প গ্রহণ করছে তাতে শুধু সরকারি নয় বেসরকারিভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. এম আর তালুকদার মুজিব বলেন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের এই প্রকল্পের সাথে প্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করা উচিত। এসব জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়নের আওতায় আনতে হলে আগে শিক্ষিত করতে হবে। অথচ দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। আমাদের বড় একটি সমস্যা হচ্ছে জনবল সংকট। সব কিছু নামে থাকে অথচ কাজের বেলায় সংকট। যেমন সেমিনারে সব কিছু আপডেট থাকে বাস্তবে আপডেট থাকে না। আমাদের প্রকল্প, টাকা সব আছে কিন্তু বাস্তব প্রজ্ঞা নেই। বেডের অভাবে টয়লেটের পাশে থাকতে হয় রোগীকে। এটি অমানবিক। কিন্তু কিছুই করার নেই। দেখি কিছু বলতে পারি না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারি না। অর্থাৎ আমরা কোনো না কোনোভাবে একেকজন প্রতিবন্ধী।

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের আঞ্চলিক পরিচালক মোহাম্মদ জসীমের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন সরকারি ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ের পুলিশ সুপার নূরুল আমিন ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. রাসেল। মুখ্য আলোচক ছিলেন ইপিডব্লিউডিআইসিটির উপ-প্রকল্প পরিচালক গোলাম রবাবানী।

মুক্ত আলোচনায় প্রতিবন্ধীরা ২০১৩ সালে পাস হওয়া প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন সর্ম্পকে সর্ব সাধারণকে অবহিত করতে এবং কার্যকর করতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর