ঘটনার তদন্ত ছাড়াই প্রতিপক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারের বিরুদ্ধে একের পর এক চুরির মামলা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ জ মো. মাসুদুজ্জামান মিলুর বিরুদ্ধে। ওই ঠিকাদারের কাছ থেকে দাবিকৃত মাসোহারা না পেয়ে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছেন ওসি।

শনিবার (২৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন হয়রানির শিকার ঠিকাদার ফেরদৌস ওয়াহিদ রাসেল। পিরোজপুর সদর উপজেলার পশ্চিম শিকারপুর মেসার্স সরদার ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী তিনি।

লিখিত বক্তব্যে ফেরদৌস ওয়াহিদ রাসেল বলেন, তার চাচা এনায়েত হোসেন সরদারের সাথে পারিবারিকভাবে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এনায়েত হোসেন সরদার তাকে ঘায়েল করতে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বাসার কেয়ারটেকার দিয়ে থানায় ১৮ হাজার ৫০০ টাকা চুরির অভিযোগ দায়ের করান। ওসি সেই অভিযোগের কোনো ধরনের প্রাথমিক তদন্ত না করেই সরাসরি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেন (মামলা নং ০২/৩২)। 

এ ছাড়া সেই একই বাদীর দ্বারা ১১ মে ফেরদৌস ওয়াহিদ রাসেলের নিজের জমিতে উত্তোলিত ঘর থেকে মিটার চুরির অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগও তদন্ত ছাড়া মামলা হিসেবে গ্রহণ করে রাসেলকে গ্রেপ্তার করেন ওসি মাসুদুজ্জামান মিলু। (মামলা নং ০৮/১১৬)। একইসঙ্গে গ্রেপ্তারের ছবি তুলে স্বপ্রণোদিত হয়ে ওসি বিভিন্নজনকে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করান।

ফেরদৌস ওয়াহিদ রাসেল বলেন, আমি পিরোজপুরের প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। আমার মা, ভাই ও বোন ইউরোপে বসবাস করেন। অথচ আমার বিরুদ্ধে একই বাদী দিয়ে অভিযোগ আনা হয়েছে আমি সামান্য সাড়ে ১৮ হাজার টাকা চুরি করেছি। শুধু সেখানেই শেষ নয়, আমার নিজের ঘরের মিটার চুরি আমি নিজে করেছি এমন মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারাভোগও করতে হয়েছে। 

প্রকৃতপক্ষে ওসি আ.জ. মো. মাসুদুজ্জামান মিলু পিরোজপুর সদর থানায় যোগ দেওয়ার পরে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে আমাকে খবর পাঠাতেন এবং ডেকে মাসোহারা দাবি করতেন। আমি দিতে অস্বীকার করায় তিনি বলেছিলেন, আমাকে এমন ক্ষতি করবেন যেন কারও কাছে মুখ দেখাতে না পারি। আমি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হলেও আমার বিরুদ্ধে একের পর এক চুরির মামলা তদন্ত ছাড়া গ্রহণ করে তার মনে জমে থাকা ক্ষোভের প্রতিশোধ নিচ্ছেন।

ওয়াহিদ রাসেল দাবি করেন, তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। পক্ষান্তরে ওসি মাসুদুজ্জামান মিলুর পরিবার বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। ওসির আপন ছোট ভাই বরগুনা জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদুজ্জামান টিপন। তিনি ওসি হলেও আওয়ামী লীগের নেতাদের সহ্য করতে পারেন না। কোনো আওয়ামী লীগের নেতার কাছে বা ব্যবসায়ীর কাছে মাসোহারা চাইলে এভাবে সামাজিক, অর্থনৈতিক নির্যাতন চালান। তিনি এর আগে বাউফল, বাকেরগঞ্জ ও নলছিটি থানা থেকে অপকর্মের দায়ে ক্লোজড হন।

রাসেল বলেন, দাবি অনুসারে মাসোহারা না দেওয়ায় ওসি মাসুদুজ্জামান মিলু আমার পারিবারিক বিরোধকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়ে আমাদের পরিবারকে উৎখাতের চক্রান্ত করছেন। আমি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির হস্তক্ষেপ কামনা করি। একইসঙ্গে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করছে।

যদিও অভিযোগের বিষয়ে ওসি আ জ মো. মাসুদুজ্জামান মিলু দাবি করেন, জমি নিয়ে তার চাচার সঙ্গে বিরোধ আছে। চাচা মামলা দায়ের করলে আমার কিছু করার নেই। একই ব্যক্তির বিষয়ে একই বাদী একই অভিযোগে একাধিক মামলা দিতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনাস্থল আলাদা হলে আমি নিতে বাধ্য। ওসি বলেন, আমার ভাই বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরআই