কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে বক্তব্য দেন কাদের মির্জা

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি ও পরিদর্শককে (তদন্ত) প্রত্যাহার এবং চরকাঁকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম সবুজকে গ্রেপ্তারের দাবিতে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি শেষ হয়েছে। 

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন দুই ঘণ্টা থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। 

মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোয়াখালীর অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সব সময় কথা বলে যাব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

এর আগে গত মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা ফেনীর দাগনভূঁইয়া ও চট্টগ্রামে তার ওপর হামলা ও হত্যার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বসুরহাট রূপালী চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করেন। যাতে তিনি ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, নোয়াখালীর সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীসহ দাগনভূঁইয়া ও সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করেন।

সংবাদ সম্মেলন চলাকালে উপজেলার টেকের বাজারে আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে একটি সমাবেশ করেন চরকাঁকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ফখরুল ইসলাম। কাদের মির্জা কোম্পানীগঞ্জকে জিম্মি করে রেখেছেন উল্লেখ করে তিনি বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। সমাবেশ শেষে সেখানে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

সমাবেশের খবরে কাদের মির্জার একদল সমর্থক টেকের বাজারে যান। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে থানা থেকে পুলিশ গিয়ে ফখরুল ইসলামকে আটক করেন। এ সময় সমর্থকরা পুলিশের কাছ থেকে ফখরুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। এ ঘটনার প্রতিবাদে কাদের মির্জা রাত সাড়ে ৮টার দিকে কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে থানার সামনে অবস্থান নেন। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন ও কোম্পানীগঞ্জের ওসির প্রত্যাহারের দাবি জানান। পাশাপাশি সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে দাবি আদায়ে বুধবার কোম্পানীগঞ্জে হরতালের ডাক দেন।

পরে একই দাবিতে রাত সাড়ে ৮টার দিকে কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে অবস্থান নিয়ে থানা ঘেরাও ও অবরোধ করেন কাদের মির্জা। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেন। তবে নেতাকর্মীরা রাতভর থানা অবরোধ করে রাখেন। পরে বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে থানার সামনে উপস্থিত হয়ে আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মেয়র কাদের মির্জা। বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) আধাবেলা হরতাল পালন শেষে দাবি আদায় না হলে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ফের কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি দেন মেয়র কাদের মির্জা। 

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টায় কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে তিনি থানার সামনে অবস্থান নেন। দুপুর ১২টায় এ  অবস্থান কর্মসূচি শেষ হয়।

এদিকে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে  ‘নোয়াখালী সদর উপজেলা, পৌরসভা আওয়ামী লীগ এবং জেলার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন’ এর ব্যানারে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মেয়র কাদের মির্জার শাস্তি দাবি করেছেন দলের নেতারা। কাদের মির্জার মিথ্যাচার, অশোভন আচরণ ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের নামে বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে নোয়াখালী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ পিন্টু বলেন, কাদের মির্জা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে অপমানিত করছেন। এসব অশোভনীয় এবং সংগঠনবিরোধী অসদাচরণের জন্য তার শাস্তি দাবি করছি। 

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি কাদের মির্জা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করেছেন। যা দলের গঠনতন্ত্রের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তার বক্তব্য শুনলে মনে হয় তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হিসেবে নয়, বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থিত কতিপয় রাজনৈতিক দলের ভোটে বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সামছুদ্দিন জেহান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান নাছের, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইমন ভট্ট, যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হক বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান আরমান প্রমুখ।

হাসিব আল আমিন/আরএআর