নিহত মা রুবিয়া বেগম, মেয়ে জান্নাতুল মাহা ও ছেলে তাহসান

সিলেট নগরীর বিআইডিসি এলাকার মীর মহল্লায় সৎ মা, বোন ও ভাইকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন আহবাব হোসেন (১৯)। তিনি ঘরের ভেতর আগুন দেওয়ার পর ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় পুরো ভবন। এরপরই প্রতিবেশীরা এসে জড়ো হয়ে আবাদকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। 

আটক আহবাব হোসেন ওই এলাকার বাসিন্দা আবদাল হোসেন খানের প্রথম স্ত্রী সুলতানা বেগমের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আহবাব হোসেন বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সৎ মা রুবিয়া বেগম (৩০), বোন জান্নাতুল মাহা (৯) ও ভাই তাহসানকে (৭) দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। এরপর তিনি বালিশ, বিছানা ও কিছু  আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেন। পোড়া গন্ধ ও ধোঁয়ায় ওই বাসার নিচ তলার লোকজন চিৎকার শুরু করলে আশপাশের মানুষ এসে জড়ো হন। 

স্থানীয় বাসিন্দা আনিস মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, লোকজনের চিৎকার শুনে ওই বাসায় যাই। সেখানে  গিয়ে দেখি ঘরের দরজা-জানালা সব বন্ধ। পরে আমরা শাবল ও খুন্তি দিয়ে জানালা ভাঙার চেষ্টা করি। না পেরে আমরা দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখি আহবাব সবাইকে খুন করে ঘরে আগুন দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো ঘরে পোড়া গন্ধ। ঘরের আসবাবপত্র, বিছানা সব কিছু এলোমেলা। যেন তাণ্ডবলীলা চলেছে ঘরটিতে। 

প্রতিবেশীরা জানান, আবদাল হোসেন খানের প্রথম স্ত্রী সুলতানা বেগমের দুই সন্তান। তিনি আহবাব হোসেন ও এক মেয়েক নিয়ে বিয়ানীবাজারের পূর্বমুড়িয়া ইউনিয়নের আষ্টঘড়ি গ্রামে বসবাস করেন। আর সিলেটের মীর মহল্লায় ভাড়া বাসায় দ্বিতীয় স্ত্রী রুবিয়া বেগম ও তার দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন আবদাল। তবে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে এখনও আবদাল হোসেনের বিচ্ছেদ হয়নি। প্রায় আট বছর ধরে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে মীর মহল্লায় বসবাস করে আসছেন। 

আটক আহবাব হোসেন

তিন থেকে চার মাস আগে আবদাল তার প্রথম পক্ষের ছেলে আবাদকে বিয়ানীবাজার থেকে সিলেটে  নিয়ে আসেন। মীর মহল্লায় আবদালের একটি মুদি দোকান রয়েছে। সেখানে কাজে সাহায্য করার জন্যই তাকে নিয়ে আসেন আবদাল। তারা বাসাটির দ্বিতীয় তলায় থাকতেন। তবে আহবাব আসার চার মাসের মধ্যে কোনো সময় পারিবারিক ঝামেলা বা কোনো চিৎকার কখনও প্রতিবেশীরা শোনেননি। এমনকি গত ১৫ দিন আগেও আহবাব তার সৎ মা রুবিয়া বেগমকে নিয়ে মা সুলতানা বেগমের বাড়িতে গিয়ে ঘুরে  আসেন।

এদিকে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হারিয়ে শোকে পাগলপ্রায় আবদাল হোসেন খান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেন সে (আহবাব) এটা করেছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আহবাব তার বোন ও মায়ের প্রতি খুবই যত্নশীল ছিল। তারা কেউ কাউকে ছাড়া খাওয়া-দাওয়া করতো না। এমনকি আমার প্রথম স্ত্রীও প্রতিদিন খোঁজখবর নিতো, মোবাইলে কথা বলতো।   

খাদিমপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন,  রাতে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। ঘরে ধোঁয়া দেখে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিয়ে দরজা ভেঙে আমরা ভেতরে ঢুকে হতবাক হয়ে যাই। নৃশংসভাবে তিনজনকে কোপানো হয়েছে। এটা দেখে তাৎক্ষণিক পুলিশে খবর দিয়ে আহবাবকে আমরা পুলিশে সোপর্দ করি এবং তার সৎ মা, ভাই ও বোনকে হাসপাতালে পাঠাই।

খাদিমপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আফছর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে ঘটনাটি ঘটেছে তা খুবই মর্মান্তিক। আহবাবের বাবার অবস্থা খুবই খারাপ। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। 

নগরীর শাহপরান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আহবাব হোসেনের দায়ের কোপে সৎ মা রুবিয়া বেগম ও বোন জান্নাতুল মাহা ঘটনাস্থলেই মারা যান। আর ভাই তাহসান আহমদকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শুক্রবার ভোরে সেও মারা যায়। ঘটনার পর পুলিশ আহবাব হোসেনকে আটক করেছে।

ওসি বলেন, তিনজনকে কোপানোর পর সোফার ওপর একটি দিয়াশলাই দেখতে পেয়ে বিছানায় আগুন দেন আহবাব। জিজ্ঞাসাবাদে আহবাব জানিয়েছেন- তার মাথা ঠিক ছিল না। রাগের মাথায় তিনি ঘরে আগুন দেন। তবে আগুন দাও দাও করে জ্বলে ওঠেনি। আগুনে বিছানার একপাশ পুড়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়।

তুহিন আহমদ/আরএআর