ঘরে একমুঠো চাল নেই, আমরা পানি খেয়ে থাকব, কিন্তু বাচ্চারা?
ঘর থেকে বের হতে পারছি না। বৃষ্টিতে কাজ বন্ধ। বাচ্চাগুলাকে খাওয়ানোর জন ঘরেও একমুঠো চাল নেই। এক দিন কাজে না গেলে মুখে ভাত ওঠে না। আমরা না হয় পানি খেয়ে দিন কাটাব কিন্তু বাচ্চারা? কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া এলাকার ভূমিহীন নামদেল আলী (৪০)।
নামদেল আলী বলেন, অন্যের জমিতে কোনো রকম একটা ঘর তুলে আছি। নিজের কোনো জায়গা-জমি নেই। এক দিন কাজ না করলে চাল কেনার উপায় থাকে না। তার মধ্যে বৃষ্টিতে কাজ বন্ধ। ছোট ছোট তিন বাচ্চাকে নিয়ে খুব বিপদে আছি। এত কষ্ট আর সহ্য হয় না। একদিকে খাবার নেই, অন্যদিকে জায়গার মালিক এখান থেকে চলে যেতে বলছেন। এখন ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাব, কী খাব?
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নামদেলের নিজের কোনো জায়গা-জমি নেই। দীর্ঘ দিন ধরে মিলপাড়া এলাকার একরামুল হাসান নামে এক ব্যক্তির আশ্রয়ে অন্যের দেওয়া একটি এক চালা টিনের ঘরে স্ত্রী মিনু বেগম (৩৫), ছেলে মিজানুর (৭), ঈদুল (৫) ও লামিয়াকে (১) নিয়ে বসবাস করছেন। দিনমজুরের কাজ করে কোনোভাবে চলছিল পাঁচ সদস্যের অভাব অনটনের সংসার। তবে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে মাঠে কাজ করতে পারছনে না নামদেল। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি কাজ করতে না পারায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে ভূমিহীন পরিবারটি।
বিজ্ঞাপন
কথা হয় নামদেলের স্ত্রী মিনু বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃষ্টির জন্য আমার স্বামী কোথাও কাজ করতে যেতে পারছে না। ঘরে একটা চালও নেই। মানষের বাড়ি থেকে আধা কেজি চাল আনি সকালে রান্না করছি। আর কাঁঠালের বিচি ভর্তা করে সবাই খাইছি। পরে যে কি খাব তার ব্যবস্থা নেই।
জমির মালিক একরামুল হাসান বলেন, কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে এখানকার দিনমজুর মানুষজনের অচল অবস্থা হয়েছে। তাদের কোনো কাজকর্ম নেই। নামদেলের পরিবারটিরও একই অবস্থা। তারা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। আমার যতটুকু সামর্থ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তিনি সমাজের দানশীল পরিবারগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
স্থানীয় মোক্তার আলী বলেন, নামদেল একজন ভূমিহীন। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালায়। তার আয় হিসেবে পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেশি। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে। আর কয়েক দিন থেকে বৃষ্টির কারণে মাঠে কাজ করতে পারছে না নামদেল।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুল হাসান বলেন, ওই পরিবারটির যদি ঘরে খাবার না থাকে, তাহলে খুব দ্রুত তাদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে।
জুয়েল রানা/এসপি