চার বছরের সংসার জীবনে জন্ম নিয়েছিল ফুটফুটে একটি ছেলে সন্তান। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা না হওয়ায় স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন স্বামী। ডিভোর্স হলেও বাকি থাকা দেনমোহর পরিশোধ করা হয়নি। এর প্রায় দুই মাস পর আদালতে হাজির হয় সাবেক স্ত্রী। মামলা করেন স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির নামে। এরপর দীর্ঘ এক বছর পর আদালত ৪ বছরের ছেলে সন্তানের কথা ভেবে আবারও তাদের বিয়ে করিয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতের বিচারক মো. আয়েজ উদ্দিন পুনরায় তাদের বিয়ের সিধান্ত দেন। পরে আদালত কক্ষে দুই পরিবারের লোকজন ও উভয়পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়। এসময় আদালতের পক্ষ থেকে শাড়ি ও পাঞ্জাবি উপহার দেয়া হয়। যা পরিধান করেই সম্পন্ন হয় বিয়ে। 

দুই পরিবার ও আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মাইনুল ইসলামের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম (২৯) ও সদর উপজেলার মহারাজপুর শেখপাড়া গ্রামের মুখলেসুর রহমানের মেয়ে সাবেরা খাতুনের (২২)। পরে তাদের বনিবনা না হওয়ায় ২০২১ সালের ১৬ জুন বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরে একই বছরের ১১ আগস্ট মামলা করেন সাবেরা খাতুন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আদালতে মামলাটি চলমান ছিল। আজকে (বৃহস্পতিবার) এ নিয়ে বিজ্ঞ আদালত সাক্ষীদের বক্তব্য গ্রহণ করেন। পরে দুই পরিবার ও স্বামী-স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে পুনরায় বিয়ের সিধান্ত দিয়েছেন। এমনকি আদালতের পক্ষ থেকে বিয়ের জন্য শাড়ি-পাঞ্জাবি উপহার দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, শিশুটির ভবিষ্যৎ বিবেচনায় নিয়ে ব্যতিক্রমী এই সিদ্ধান্ত দেন আদালত। আদালতের এই সিদ্ধান্ত ফলে শিশুটি তার পিতৃস্নেহ ফিরে পাবে। পুনরায় বিয়েতেও আগের দেনমোহর ৯৯ হাজার ৫০০ টাকায় রাখা হয়েছে।

ছেলে ও সংসারের মঙ্গল কামনায় সকলের কাছে দোয়া চেয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যা হবার হয়ে গেছে। পূর্বের সবকিছু ভুলে আবারও আমরা নতুন করে জীবন শুরু করতে চাই। ডিভোর্স হয়ে গেলেও শুধুমাত্র চার বছর বয়সী আমার ছেলে জুনাইদের দিকে তাকিয়ে আবারও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। আদালতের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব, এমন সিদ্ধান্ত দেয়ায়। আদালতের এই সিদ্ধান্তে দুই পরিবারের সবাই খুশি। 

প্রসঙ্গত, আগের দিন বুধবার (১৫ জুন) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক হুমায়ন কবীরের কক্ষে এমন আরেকটি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক বনিবনা না হওয়ায় প্রসূতি থাকা অবস্থায় পেটে সাত মাসের বাচ্চা নিয়েই ডিভোর্স হয় ওই দম্পতির। বাচ্চা হওয়ার পরে মেয়েটি আদালতে হাজির হলে ৮ মাসের বাচ্চা কোলে নিয়ে বিচারকের কক্ষেই লাল শাড়িতে বধূ সেজে পুনরায় বিয়ে হয় গোমস্তাপুর উপজেলার হোগলা গ্রামের মৃত এনামুল হকের ছেলে মো. নাদিম আলী (২৭) ও একই উপজেলার রাজারামপুর উপরটোলা গ্রামের আব্বাস উদ্দিনের মেয়ে শিউলী খাতুনের (১৯)।

মো. জাহাঙ্গীর আলম/এমএএস