সাংবাদিক তানভীর হাসান তানু

বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল স্মৃতি ‘দাবানল গুণীজন সম্মাননা-২০২২’ পেয়েছেন ঢাকা পোস্টের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ। তৃণমূল পর্যায়ে সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। সোমবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় রংপুর টাউন হল মিলনায়তনে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরও তিন সাংবাদিকসহ ১৭ জনকে এই সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। রংপুর থেকে প্রকাশিত স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক দাবানলের ৫২ বছরে পদার্পণ উদযাপনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এতে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঁইয়া। সম্মানিত অতিথি ছিলেন রংপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঁইয়া বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রকাশনা শুরু করে সাপ্তাহিক রণাঙ্গন সময়ের প্রয়োজনে সাপ্তাহিক মহাকাল থেকে দৈনিক দাবানল হয়েছে। তিনটি নামের তাৎপর্য অনেক এবং তৎকালীন প্রেক্ষাপটে এই পত্রিকা পাঠকের আস্থা অর্জনে এগিয়ে ছিল বলেই আজও টিকে আছে। এই পত্রিকা রংপুর অঞ্চলের সাংবাদিকদের মানোন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে বলেই এখান থেকে অনেক গুণী সাংবাদিক তৈরি হয়েছে। প্রকাশনার ৫১ বছর, যেকোনো গণমাধ্যমের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জিং পথচলা।

তিনি আরও বলেন, দায়িত্বশীল ও নৈতিক সাংবাদিকতায় জোর দিতে হবে। গণমাধ্যম কর্মীদের লেখনী সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখে আসছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে একটি বস্তুনিষ্ট সংবাদ সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দাবানলসহ প্রতিটি গণমাধ্যম সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফিরুজুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার উৎপল কুমার রায়, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ মো. ফরহাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। 

এতে রংপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুব রহমানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দাবানলের সম্পাদক খন্দকার মোস্তফা সরওয়ার অনু, নির্বাহী সম্পাদক সুশান্ত ভৌমিক। পুরো অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন দৈনিক দাবানলের প্রধান প্রতিবেদক ফরহাদুজ্জামান ফারুক। 

আলোচনা সভা শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৭ জনকে বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল স্মৃতি ‌‌'দাবানল গুণীজন সম্মাননা-২০২২' প্রদান করা হয়। এতে ঢাকা পোস্টের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগের পক্ষে তার ছোট ভাই সাংবাদিক তানভীর হাসান তানু অতিথিদের কাছ থেকে  সম্মাননা গ্রহণ করেন।

সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সফল রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনসুর আহমেদ (মরণোত্তর), মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট বীর প্রতীক আতাহার হোসেন আতাউর, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা একুশে পদকপ্রাপ্ত আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকন, সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুস সাহেদ মন্টু, সাপ্তাহিক মহাকাল ও দৈনিক দাবানলের সাবেক বার্তা সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক মাহবুবুল ইসলাম, বার্তা২৪ ডটকমের বিশেষ প্রতিবেদক সেরাজুল ইসলাম সিরাজ।

জনসেবার জন্য কিশোরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ্ মো. আবুল কালাম বারী পাইলট, বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলার রহমান, হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কুমারেশ রায়, ভাওয়াইয়ার বিকাশে অবদানের জন্য ভাওয়াইয়া অঙ্গনের প্রতিষ্ঠাতা এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, সাহিত্যিক ও লেখক হিসেবে অভিযাত্রিক সভাপতি রানা মাসুদ, নাট্যকার ও সংগঠক হিসেবে কবি আজহারুল ইসলাম আল-আজাদ, ক্রীড়াঙ্গণের উন্নয়নের জন্য রংপুর ক্রিকেট একাডেমির চেয়ারম্যান শাকিল রায়হান।

এ ছাড়া পেশাগত দায়িত্বে একনিষ্ঠ ভূমিকা ও জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য রংপুর সিটি করপোরেশনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তরুণ উদ্যোক্তা ও রয়্যালটি মেগামলের চেয়ারম্যান শ্রেষ্ঠ করদাতা তৌহিদ হোসেন আশরাফী এবং কৃষি ও মৎস উদ্যোক্তা হিসেবে নিওলিথিক অ্যাগ্রো লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আ স ম শফিউল আলম।

প্রসঙ্গত, দৈনিক দাবানল রংপুর অঞ্চলের বহুল জনপ্রিয় পত্রিকাগুলোর একটি। প্রকাশনার শুরুতে এ পত্রিকার নাম ছিল সাপ্তাহিক রণাঙ্গন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের মুক্তাঞ্চল থেকে এর যাত্রা শুরু হয়। যার সম্পাদক ছিলেন খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল। স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করতে কে জি মোস্তফা বা মোস্তফা করিম ছদ্ম নামে লিখতেন ও পত্রিকাটি প্রকাশ করতেন তিনি। ওই সময়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত মানুষের মনোবল ধরে রাখতে এ পত্রিকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পত্রিকা বিলি করতে গিয়ে খন্দকার বদিউজ্জামান ও নুরুল ইসলাম ঢালী নামে দুজন পাকিস্তান বাহিনীর হাতে শহিদ হয়েছেন।

খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল ১৯৭৪ সালে রণাঙ্গন পত্রিকার নাম পরিবর্তন করে শুরু করেন সাপ্তাহিক মহাকালের প্রকাশনা।  স্বাধীনতা পরবর্তী মহাকাল ছিল এই অঞ্চলে সংবাদপত্রের ইতিহাসের একটা টার্নিং পয়েন্ট। ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত চালু ছিল সাপ্তাহিক মহাকাল। সংসদ সদস্য থাকাকালীন ১৯৮১ সালে খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুলকে দৈনিক পত্রিকা বের করতে উদ্বুদ্ধ করেন চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন। ওই সময় মোনাজাত উদ্দিন মহাকাল পত্রিকাটির যাবতীয় দেখভাল করতেন। 

এভাবেই সাপ্তাহিক রণাঙ্গন থেকে সাপ্তাহিক মহাকাল হয়ে দৈনিকে রূপ নেয় দাবানল। মহান মুক্তিযুদ্ধের রণক্ষেত্র থেকে যাত্রা করা এই প্রকাশনাটি ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও গৌরবের ৫১ বছর পেরিয়ে এখন বায়ান্নতে পদার্পণ করেছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই