‘সুলতান’ আচরণে বেশ শান্তশিষ্ট। তবে একবার রাগলে থামানো মুশকিল। এ কারণে তাকে মোটা রশি দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরু সুলতান দেখতে দারুণ আকর্ষণীয়। তাই কোরবানির বাজারে সে নজর কাড়ছে সবার।

সাড়ে তিন বছর বয়সী এবং সাড়ে ৫ ফুট উচ্চতা ও সাড়ে ৮ ফুট দৈর্ঘ্যের সুলতানের ওজন প্রায় ৩৭ মণ বা ১ হাজার ৪৮০ কেজি। পরম মমতায় লালন-পালন করা গরুটিকে এবার অন্যের হাতে তুলে দিতে চান মালিক নুরুল আমিন। দাম চাচ্ছেন ১২ লাখ টাকা।

কালো চোখ, কালো ও সাদা চামড়ায় আবৃত নাদুসনুদুস সুলতানের খাবারে রয়েছে বৈচিত্র্য। সুলতানি ভাবসাবে তিন বেলা মাল্টা, আপেল ও কলা খায় সে। পাশাপাশি অন্যান্য দেশি খাবার তো আছেই।

কোরবানির হাট কাঁপাতে প্রস্তুত সুলতানকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন ক্রেতাসহ উৎসুক জনতা।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হরিচরণ লস্কর বালাপাড়া গ্রামে কৃষক নুরুল আমিনের বাড়িতে গেলে দেখা মেলে বিশাল আকৃতির সুলতানের।

মানাস নদীর কোলঘেঁষা ওই বাড়ির ভেতরে টিনের ছাউনি দেওয়া একটি ঘরে গরুটিকে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঝকঝকে সাদা রঙের মাঝে অল্প একটু কালো রঙের মিশেলে দৃষ্টিনন্দন সুলতান। মাথার সামনের ভাগ সাদা, দুই পাশে কালো রং। ঘাড়ের কাছ থেকে লেজ পর্যন্ত পুরো দেহ সাদা। বাঁ দিকে পেট ও পিঠের দুটি স্থানে রয়েছে কালো ছাপ।

গরুটির মালিক নুরুল আমিন জানান, প্রায় সাত বছর আগে ছোট একটি দেশি গরু কিনেছিলেন। ‘রাজা বাবু’ নামের সেই গরুর পেটে জন্ম হয় সুলতানের। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর খাবারের চাহিদা বাড়তে থাকে। এখন সাড়ে তিন বছর বয়স তার। প্রতিদিন কাঁচা ঘাস, খড়, গমের ভুসি, ধানের কুঁড়া, ভুট্টা ও খুদের ভাত খাওয়ানো হয় একে। দৈনিক খাবার খায় প্রায় ৮০০ টাকার। পাশাপাশি মাল্টা, আপেল ও কলাও খাওয়ানো হয়। এর ওজন এখন প্রায় ৩৭ মণ।
 
তিনি আরও জানান, তার বসতভিটা ছাড়া কোনো আবাদি জমি নেই। অন্যের বাড়িতে তিনিসহ তার দুই ছেলে দিনমজুরি করেন। নিজেদের পরিবারের চেয়েও এই সুলতানের খাবারের পেছনে তাকে বেশি খরচ করতে হয়েছে।

নিয়মিত গোসল করানো হয় সুলতানকে, মাথার ওপর ফ্যান দিয়ে বাতাস দেওয়া হয়। অর্থ-সামর্থ্যে গরিব হলেও আদরের ‘সুলতানের’ যত্নে কোনো কমতি রাখেননি বলে জানান কৃষক নুরুল আমিন। এবার কোরবানি উপলক্ষে বিক্রি করতে চান সুলতানকে। তার চাহিদা ১২ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে কয়েকজন ১০ লাখ টাকা দাম বলেছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের দাবি, সুলতানই কাউনিয়া উপজেলার সবচেয়ে বড় গরু। প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে বিশালদেহী সুলতানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

কাউনিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিঞ্চিতা রহমান বলেন, ‘সুলতান’ উপজেলার সবচেয়ে বড় গরু। দেশি খাবার খেয়ে বেড়ে ওঠা এ গরুটি বেশ সুস্থ-সবল ও সুঠাম দেহের অধিকারী। এর ওজন প্রায় ৩৭ মণ। অনেক কষ্ট করে ওই কৃষক গরুটিকে লালন-পালন করেছেন।

রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ট্রেনিং অফিসার বাবুল হোসেন জানান, জেলায় এবার কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭০০ পশু মোটাতাজা করা হচ্ছে। আর চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৩০০টি পশুর।

এবার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পশুর হাটে পশু চিকিৎসকের টিম থাকবে বলে জানান তিনি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ