পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় গ্রামের সব বাড়িতেই পৌঁছায় কোরবানির মাংস
আধুনিক সমাজে পঞ্চায়েত সমাজ ব্যবস্থা এখন আর দেখা যায় না। তবে পঞ্চায়েত হলো সামাজিক ব্যবস্থার এক অন্যতম ধারক ও বাহকের সমষ্টি। পঞ্চায়েত বলতে পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত পর্ষদকে বোঝায়। বাংলার ইতিহাসের মতোই প্রাচীন প্রথা হলো পঞ্চায়েত। গ্রামের সরদারই হয়ে থাকেন পঞ্চায়েত প্রধান। সেখানে তার দেয়া ব্যবস্থায় চলে সমাজ।
প্রাচীনকালে গ্রাম-সংসদ অথবা পঞ্চায়েত রাজা কর্তৃক মনোনীত বা কোনো গ্রামের জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হতো। গ্রাম প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় পঞ্চায়েতগুলিতে সকল শ্রেণি ও বর্ণের লোকদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। তবে এখনও কিছু এলাকাশ পঞ্চায়েত বা সেই সব সামাজিক ব্যবস্থা বিদ্যমান দেখা যায়। যদিও আগের মতো সেইসব কার্যক্রম এখন তার তাদের মাধ্যমে হয় না। বা তারা সেই কার্যক্রম করার ক্ষমতা রাখে না। কোরবানি ঈদে এ পঞ্চায়েত ব্যবস্থার কিছু কার্যক্রম দেখা যায়। বিশেষ করে গ্রামে এখনও পঞ্চায়েতের ধারা কিছুটা চলমান রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কিশোরগঞ্জের কয়েকটি পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এখনও টিকে রয়েছে, যার একটির বয়স প্রায় শত বছর। জেলার সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের রংগারকোনা, পাকুন্দিয়া উপজেলার জুনাইল, আংগিয়াদী এবং মজিতপুরে এখনও কয়েকটি পঞ্চায়েত পদ্ধতি বহমান রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় পঞ্চায়েত সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের রংগারকোনা পঞ্চায়েত।
আশকর হাজী পঞ্চায়েতটি সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন দাতব্য ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। সবচেয়ে আলোচিত যে উদ্যোগটি যুগ যুগ ধরে তারা করে আসছে তা হল পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কোরবানির মাংস বন্টন।
বিজ্ঞাপন
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের শহরতলী গ্রাম রংগারকোনা। এ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী আশকর হাজী বাড়ী জামে মসিজদ ঈদগাহ মাটে প্রায় শত বছর ধরে একসঙ্গে গ্রামের সকলের কোরবানির পশু জবাই করা হয়। এই পঞ্চায়েত প্রথা তাদের পূর্ব পুরুষ আশকর হাজীর আমল থেকে শুরু হয়ে এখনও বহমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকভাবে এ প্রথার নেতৃত্ব রয়েছেন আশকর হাজীর বংশধর মো. রুকুন উদ্দিন। তিনি মারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন। মাঠে কোরবানির পশুগুলো জবেহ করেন মসজিদের খতিব জনাব মাওলানা মাসুদুর রহমান।
বর্তমানে এই পঞ্চায়েতের সদস্য বা 'ঘর' সংখ্যা হল প্রায় ৩৫০। প্রতি কোরবানির ঈদে এদের মধ্যে গড়ে ৩০/৩৫টি পরিবার কোরবানি দিয়ে থাকে। আর বাকি ৩০০ পরিবার কোনো না কোনো কারণে কোরবানি দিতে পারে না। ঈদের আনন্দে যেন ভাটা না পড়ে তাই তাদেরকেও পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সমবন্টন করে কোরবানির মাংস দেয়া হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ পঞ্চায়েতের প্রধান সর্দার মো. রুকুন উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, উদাহরণ স্বরুপ ধরেন- এ বছর এ পঞ্চায়েতের প্রায় ৩০ বা ৩৫টি পরিবার পশু কোরবানি দিতে পারেন। ঈদের দিন সকালে তারা তাদের জবাইকৃত পশুর এক-তৃতীয়াংশ পঞ্চায়েতের মাঠে দিয়ে যাবেন। আর বাকি অর্ধেক রাখবেন তাদের নিজেদের জন্য। এছাড়া সে জবাইকৃত পশুর চামড়াও পঞ্চায়েতে জমা দেবেন। এভাবে ৩০ বা ৩৫টি পরিবারের অর্ধাংশ করে মাংস জমা হওয়ার পর নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে তা কেটে ভাগ করা হবে।
অর্থ্যাৎ পঞ্চায়েতে মাংস দেয় ৩০ বা ৩৫টি পরিবার। কিন্তু ভাগ হবে পঞ্চায়েতের ৩০০টি পরিবারের মধ্যে। অর্থাৎ এ পঞ্চায়েতের বা সমাজের যিনি কোরবানি দিয়েছেন তিনিও মাংস পান এবং যিনি কোরবানি দেননি তিনিও মাংস পান। অর্থাৎ এ পঞ্চায়েতের সব ঘরেই কোরবানির মাংস পৌঁছায়।
পঞ্চায়েতের যুবক সদস্য প্রকৌশলী শেখ জাবেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পঞ্চায়েতের মাংস বন্টনের কাজে নিয়জিত স্বেচ্ছাসেবকদের কোনো অর্থ দেওয়া হয় না। খুশি মনেই সবাই এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এলাকাভিত্তিক সম্পর্কের বন্ধন এখনও টিকিয়ে রেখেছে পঞ্চায়েতর মাধ্যমে।
বর্তমানে দুটি পদ্ধতিতে আমরা প্রাথমিক বাছাই সম্পন্ন করি। যিনি অত্র এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছেন অথবা বৈবাহিক সূত্রে।
এসকে রাসেল/এমএএস