সাগরে ভাসছে টেকনাফ থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলার : ইউএনএইচসিআর
এর আগেও ট্রলারে করে সাগর পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন রোহিঙ্গারা
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহন করা একটি ট্রলার আন্দামান সাগরে ভাসছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। গত দুদিন ধরে ট্রলারটি সাগরে দুর্গত অবস্থায় রয়েছে।
ইউএনএইচসিআর বলছে, ১০ দিন আগে রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলারটি কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সাগরপথে রওনা দিয়েছিল। ইতোমধ্যে ট্রলারে থাকা কিছু শরণার্থী মারা গেছেন এবং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে জেনেছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্তক অবস্থানে রয়েছেন। ফলে এখান থেকে সাগরপথে অবৈধভাবে রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলার রওনা দেবে এমন সম্ভাবনা নেই।
আন্দামান সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলারটি টেকনাফ থেকে রওনা দিয়েছে, এমন তথ্য পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র মোস্তফা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে জেনেছি, বেশ কয়েকদিন আগেই ট্রলারটিতে পানি ও খাবার শেষ হয়ে গেছে। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ইঞ্জিন বিকল হয়ে আছে এবং তখন থেকে ট্রলারটি সাগরে ভাসছে। তবে এখনও পর্যন্ত ট্রলারে কত জন শরণার্থী রয়েছেন? সেটি জানা যায়নি। কিছু রোহিঙ্গা মারা যাওয়ার খবরও পেয়েছি। ফলে এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট নৌ-সীমানার সব কর্তৃপক্ষকে আমরা জানিয়ে রেখেছি। আমরা তাদের আহ্বান জানাচ্ছি, দ্রুত সহায়তা করার জন্য। এই মুহূর্তে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এসব রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচানো সম্ভব।’
রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ উল্লাহ ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘আন্দামান সাগরে রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলারের খবর শুনেছি। এই মুহূর্তে আমরা নিশ্চিত না যে, তারা
কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে রওনা দিয়েছিলেন কি-না। তবে এ বিষয়ে আমরা মাঝিদের ক্যাম্পে খোঁজ নিতে বলেছি।’
‘ইউএনএইচসিআর কীভাবে নিশ্চিত যে ট্রলারটি টেকনাফ থেকে গেছে’, এমন প্রশ্ন করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশিদ। তিনি ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘এমনও হতে পারে ট্রলারটি মিয়ানমার থেকে রওনা দিয়েছিল। দেশের সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্তক অবস্থানে থাকায় এখান থেকে রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলার যাওয়ার সুযোগ নেই। তবু বিষয়টি আমরা দেখছি।’
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে ইউএনএইচসিআর জানায়, শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌযানটিতে কতজন শরণার্থী রয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তারা বলছেন, ট্রলারটিতে সবাই বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে প্রায় ১০ দিন আগে যাত্রা শুরু করে। সেখানে আটকে পড়া শরণার্থীদের শারীরিক অবস্থা খুবই শোচনীয় এবং তারা মারাত্মক পানি শূন্যতায় ভুগছেন। এরই মধ্যে বেশ কয়েক জন প্রাণ হারিয়েছে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি। আর গত ২৪ ঘণ্টায় আরও কয়েক জন প্রাণ হারাতে পারেন বলেও আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে।
সবশেষ ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবির থেকে ৩৯৬ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু নিয়ে সাগরে ভেসেছিল একটি ট্রলার। যেটি পরবর্তী সময়ে মালয়েশিয়া ভিড়তে না পেরে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শাপলাপুর সাগর পয়েন্টে ভেসে আসে। সেটিরও ইঞ্জিন বিকল ছিল। সেই ট্রলারেও খাবার সংকটে অর্ধ-শতাধিক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
মুহিববুল্লাহ মুহিব/এফআর