ভরা বর্ষায় জয়পুরহাটে জমি ফেটে চৌচির, কৃষকদের আহাজারি
‘আল্লাহ্ পানি দাও, দয়া করে পানি দাও। আমাদের এই কষ্ট থেকে রক্ষা করো, একটু কৃষকদের দিকে তাকাও আল্লাহ।’ তীব্র দাবদাহে আর অনাবৃষ্টির কারণে মাটি ফেটে চৌচির জমির আইলে কোদাল কোপাতে কোপাতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কৃষক তোফাজ্জল হোসেন।
জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়ন কড়ই মাঠে কথা হয় ৬৫ বছর বয়সী তোফাজ্জলের সঙ্গে। বৃষ্টির আশায় জমির আইলের পাশে মাটি সরিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
এ সময় ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, জমির আইল ঠিক করে নিচ্ছি। বৃষ্টি আসলে এতে সুবিধা হবে। কিন্তু আষাঢ় মাস চলে গেল। তবুও মাঠে পানি নেই। এখন শ্যালো মেশিন অথবা ডিপের (গভীর নলকূপ) পানি মাঠে দিলে জমিতে নেব। তা ছাড়া ধান রোপণের আর কোনো উপায় নেই।
ষড়ঋতুর দেশে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল। এ সময় ফসলি জমিতে পানি টইটম্বুর করে। এই পানিকে কাজে লাগিয়ে আমন চাষ করেন কৃষকরা। কিন্তু ভরা বর্ষা মৌসুমে তীব্র খরায় জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এতে জয়পুরহাটের কৃষকরা আমন চাষ নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
বিজ্ঞাপন
এদিকে আমন চারা রোপণের বয়স পেরিয়ে গেলেও পানির অভাবে রোপণ করতে পারছেন না অনেক কৃষক। জমিতে পানি না থাকায় কেউ কেউ বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করেছেন। এতে আমন চাষে বাড়বে খরচ। এ পর্যন্ত জয়পুরহাট জেলায় কৃষকরা মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ জমিতে আমন রোপণ করতে পেরেছেন।
সদর উপজেলার কোমরগ্রামের কৃষক আব্দুল ওয়াজেদ বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করব। মামুন ধান ও বিনা-১৭ ধানের বীজ চারা হয়েছে। এই চারাতে পানিতে দিতে শতকে ২০ টাকা দিতে হচ্ছে। চারার বয়স বেড়ে যাচ্ছে। পানি না পেলে আমন রোপণ করা কঠিন হয়ে যাবে।
একই গ্রামের কৃষক আবুল বাশার বলেন, এই সময়ে মাঠে মাঠে আমন চাষ হতো। ধানের চারা রোপণ করা প্রায় শেষ হতো। কিন্তু এখন মাঠে মাঠে গরু-ছাগল চরানো হচ্ছে। এই তীব্র খরায় আমন চারাও পুড়ে যাচ্ছে। জমির মাটি ফেটে চৌচির। কোথাও কোথাও ধুলা উড়ছে। দেরিতে আমন রোপণ করলে এখন ফলন কম হবে।
চারার বয়স বেশি হওয়ায় তা উঠিয়ে অল্প জায়গায় আবারও রোপণ (কৃষকের ভাষায় 'গছি') করেছেন সদরের রাংতা-গুয়াবাড়ির কৃষক কামাল উদ্দিন। জমিতে পানি পেলেই সেই চারা খেতে রোপণ করবেন তিনি।
এই কৃষক বলেন, ধানের চারা যেন মরে না যায়, এ জন্য ‘গছি’ (দ্বৈত রোপণপদ্ধতি) করা হয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে জমি প্রস্তুত করে দ্বৈত রোপণ করা হবে। এই গছিতে সেচ দিতে বিঘাপ্রতি ৪০০ টাকা গুনতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৬৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ৬১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে উফশী এবং ৫০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় ধান আবাদ করা হবে। এ জন্য ৩৭৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ৩ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে উফশী ও ২৫ হেক্টর জমিসহ মোট ৩ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত হাইব্রিড ৮ হেক্টর ও উফশী ১৫৫ হেক্টরসহ মোট ১৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন রোপণ করা হয়েছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তীব্র এই দাবদাহ ও অনাবৃষ্টির ফলে আমন আবাদি জমিগুলো শুকিয়ে গেছে। ফলে আমন আবাদ তেমন শুরু হয়নি। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে সম্পূরক সেচব্যবস্থায় জমিতে পানি দিতে হবে।
চম্পক কুমার/এনএ