চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে দেড় বছর আগে বিদ্যুৎ বিল ও ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য বিক্রি করা দুই কন্যা শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। গত বুধবার (২০ জুলাই) দুপুরে দুই শিশুকে উদ্ধার করে প্রকৃত মা-বাবার হাতে তুলে দেন হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের নাটেহারা গ্রামের মিজি বাড়ির বেকারি ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন মিজি তার দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের দুই সন্তান আড়াই বছর বয়সী ইভা মনিকে চাঁদপুর সদর উপজেলার আলগী গ্রামের নিঃসন্তান মোতালেব বরকান্দজ এবং দেড় বছর বয়সী রিয়া মনিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার মান্দারতলী গ্রামের বাবুল ভূঁইয়ার কাছে বিক্রি করেন। চার-পাঁচ মাস আগে পরে দুই মেয়েকে ৪০ হাজার টাকা করে মোট ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন ইমরান। দুই সন্তানের কোনো ছবি বা কাগজপত্রের চিহ্ন পর্যন্ত রাখেননি তিনি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশ দুই মেয়েকে উদ্ধার করে। 

ইমরানের দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ইমরান তার প্রথম স্ত্রী ইয়াছমিনের কাছে দুই মেয়েকে নিয়ে রাখেন। সেখান থেকে কৌশলে মেয়েদের বিক্রি করে দেন। দেড় বছর ধরে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে সন্তানদের ফিরে আনবে বলে সময় পার করে আসছিলেন ইমরান। 

দেড় বছর পর দুই মেয়েকে কোলে পেয়ে জান্নাত বলেন, আমি আমার দুই মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করব। 

ইমরান বলেন, ছোট মেয়ে রিয়াকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার মান্দারতলী গ্রামের বাবুল ভূঁইয়া ও জান্নাত বেগমের কাছে বিক্রি করি। আর ইভাকে বিক্রি করি চাঁদপুর সদর উপজেলার মহামায়া পাকিস্তান বাজার এলাকায়। আমার বোনের আত্মীয়রা ওই সন্তানকে নেন। 

ইমরানের চাচাতো ভাই মাসুদ জানান, ইমরান এর আগে একটি বিয়ে করেন। তার ওই সংসারে চারটি সন্তান রয়েছে। পরে প্রেম করে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ওই সংসারে দুটি মেয়ে রয়েছে তার। প্রথম স্ত্রী ইয়াছমিনের কাছে ওই দুই মেয়েকে নিয়ে রাখেন তিনি। বিদ্যুৎ বিল ও ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য এবং আগের সংসারের স্ত্রীর সন্তান ও সাংসারিক চাপ সামালতে না পেরে ইমরান ওই দুই মেয়েকে বিক্রি করেন। পরে দ্বিতীয় স্ত্রী চট্টগামের গার্মেন্টস থেকে ফিরে সন্তানদের খোঁজ দাবি করেন। তার প্রেক্ষিতে ইমরান সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। 

তিনি আরও জানান, যারা বাচ্চাদের কিনেছিলেন তারা প্রথমে দিতে চায়নি। আদালতের মাধ্যমে নিয়ম অনুযায়ী দত্তক না নেওয়ায় তাদের ফেরত দিতে হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন হেলাল বলেন, বাচ্চাদের বিক্রি বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তাদের উদ্ধার করার পর পুলিশ আমার মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। 

হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ বলেন, স্থানীয় সংবাদ মাধমে টাকার বিনিময়ে দুটি বাচ্চা দত্তকের বিষয়ে জানতে পারি। বিষয়টি আমাদের ডিউটি অফিসারকে অবহিত করি। ৮ ঘণ্টায় বাচ্চাদের বাবাকে খুঁজে পাই। তার দেওয়া তথ্যে চাঁদপুর সদর মডেল থানার সহযোগিতায় প্রথম পর্যায়ে ইভাকে চাঁদপুর সদর উপজেলার মহামায়া পাকিস্তান বাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করি। সঙ্গে তার পালিত মাও ছিল। পরে ছোট মেয়ে রিয়াকে ফরিদগঞ্জ থেকে উদ্ধার করি। পরে আমরা মেয়ে দুটিকে নিয়ে প্রকৃত বাবা-মা ও পালিত বাবা-মায়ের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধান করি।

তিনি আরও জানান, বাচ্চারা তাদের পালিত মায়েদের ছেড়ে যেতে চাচ্ছে না। বাচ্চাদের সুরক্ষা প্রাধান্য দিতে গিয়ে তাদের ফেরত দিয়েছি। যদি কেউ কাউকে দত্তক নেন তাহলে আদালতের মাধ্যমে নিয়ম অনুযায়ী দত্তক নিতে হবে। এ ছাড়া দত্তক নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এনএ/আরএআর