মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার পীরতলা পুলিশ ক্যাম্পে কর্তব্যরত কনস্টেবল আলাউদ্দীনকে হত্যার দায়ে চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে, আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দুপুরে মেহেরপুর অতিরিক্ত জজ আদালতের বিচারক রিপতি কুমার বিশ্বাস এ রায় প্রদান করেন। রায় প্রদান শেষে দণ্ডিতদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

দণ্ডিতরা হলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া গ্রামের কালু মণ্ডলের ছেলে আনিস মণ্ডল (৩৩), একই গ্রামের আব্দুল মালেক মণ্ডলের ছেলে তাহাজুত হোসেন (৩০), সোনাউল্লাহর ছেলে শাকিল হোসেন (২৯) ও রুবেল হোসেন (৩০)।
 
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৪ জুলাই গাংনী উপজেলার পিরতলা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পুলিশের উপপরিদর্শক সুবীর রায়ের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বামুন্দি-কাজিপুর এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। মাইক্রো বাসযোগে মাদক পাচারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পীরতলা সাহেবনগর এলাকায় অবস্থান নেয় পুলিশ। তারা মাইক্রো বাসটিকে আটকানোর জন্য রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়। 

তবে মাইক্রোর চালক কৌশলে পালানোর চেষ্টা করলে কনস্টেবল আলাউদ্দীন মাইক্রোটিকে আটকের চেষ্টা করেন। এ সময় মাইক্রোটি তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আলাউদ্দীন মাইক্রো বাসের বাম্পারে আটকে গেলে তাকে টেনে-হিঁচড়ে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত দেড় কিলোমিটার দুরে ফেলে দেওয়া হয়। 

পরে আলাউদ্দীনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া ঘটনাস্থলের কাছে ৩৪০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে এ ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। কনস্টেবল আলাউদ্দীনকে হত্যা ও মাদক পাচারের কাজে ব্যবহৃত মাইক্রো বাসটি (কুষ্টিয়া চ- ০২-০০১১) কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া গ্রাম থেকে জব্দ করা হয়।
 
এ ঘটনায় বাদী হয়ে গাংনী থানায় আনিছ মণ্ডল, তাহাজুত হোসেন, শাকিল হোসেন, সিদ্দিক ও রুবেলকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন পিরতলা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পুলিশের উপপরিদর্শক সুবীর রায়। যার সেশন মামলা নং ১৩৪/২০১৬। জি আর কেস নং ২২০/১৫। একই সঙ্গে মাদক মামলায় চার্জশিটে অন্তর্ভূক্ত করা হয় আতিউর রহমানকে।

বিজ্ঞ আদালত মামলার বাদী, বিবাদী ও সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় চারজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে, আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। 

এদিকে একই ঘটনায় ফেনসিডিল রাখার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আনিস মণ্ডল, তাহাজুত হোসেন, শাকিল হোসেন এবং রুবেল হোসেনকে ৭ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে, আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন আহসানুল হক খোকন ও কামরুল হাসান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অতিরিক্তি পাবলিক প্রসিকিউটর কাজি শহিদ।

আকতারুজ্জামান/আরআই