৯ দিন ছিলেন কারাগারে, এলএপি নিয়ে বহাল রেলকর্মী
রেলে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার মামলায় ৯ দিন কারাগারে ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের নিরাপত্তা প্রহরী মামুন ইসলাম (৩০)। ওই ৯ দিন অর্জিত ছুটি (এলএপি) পেয়েছেন তিনি। এখনো তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।
মামুন ইসলাম নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে রাজশাহী রেলওয়ে হাসপাতালে কর্মরত। তার গ্রামের বাড়ি গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামার উপজেলার গোপালনগর মহারাজপুরে। ২০১৩ সালের ২৩ জুন তিনি রেলওয়েতে যোগদান করেন। রাজশাহী রেলস্টেশন সংলগ্ন শিরোইল কলোনি এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন মামুন।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, তার বিরুদ্ধে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান হিসাব কর্মকর্তার গাড়িচালক রবীন্দ্রনাথ ঘোষের আত্মীয়কে চাকরি দেওয়ার নামে ১৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ অভিযোগ রয়েছে। টাকা ফেরত চাওয়ায় রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে প্রাণনাশের হুমকি দেন মামুন।
এ নিয়ে ২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নগরীর চন্দ্রিমা থানায় মামলা করেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর পরিবারের আরও তিন সদস্যের সঙ্গে গ্রেপ্তার হন মামুন। অন্যরা সেদিনই জামিন পেলেও টানা ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ দিন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, মামুন ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। প্রতিবেদন পেলেই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু চার মাসেও প্রাথমিক তদন্ত শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ উঠেছে, ওই কর্মী পশ্চিম রেলের নিয়োগ সিন্ডিকেটের সদস্য। সিন্ডিকেটের হোতাদের কেউ কেউ রেলে কর্মরত। তারাই অভিযুক্ত মামুন ইসলামকে রক্ষায় মরিয়া।
সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, কারাবন্দি হলে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার কথা। কিন্তু মামুন ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ। উল্টো কারাগারে কাটানো ওই নয় দিন ছুটি ধরে নিয়ে কাজে বহাল করা হয়েছে। ছুটির আবেদনপত্রের সেই নথি এসেছে ঢাকা পোস্টের হাতে।
তাতে মামুন উল্লেখ করেন, পারিবারিক কাজ সমাধার জন্য তিনি ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটির আবেদন করেন। ওই সময়টুকু তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামার উপজেলার গোপালনগর মহারাজপুরে থাকার কথা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের বাড়িতে নয়, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে ৯ ডিসেম্বর রাজশাহী কারাগারে যান মামুন। তাকে আদালতে পাঠানোর সেই নথিও এসেছে ঢাকা পোস্টের হাতে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চন্দ্রিমা থানার উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) রাজু আহম্মেদ তাকে মহানগর আদালতের এডিসি প্রসিকিউশনের মাধ্যমে মেট্রোপলিটন আমলি আদালতে (চন্দ্রিমা) পাঠান।
মামলাটির তদন্ত ওই সময় চলছিল। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে জেলহাজতে আটকে রাখারও আরজি জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে ৮ দিনের মাধায় ১৭ ডিসেম্বর মামুন ইসলাম জামিন পেয়ে যান। ওই দিনই রাজশাহী কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।
১৮ ডিসেম্বর কাজে যোগদানের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন মামুন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরদিন ১৯ ডিসেম্বর পশ্চিমাঞ্চলের চিফ পার্সোনেল অফিসার বরাবর পত্র দেন বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার ডা. এস এম মারুফুল আলম।
২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি চিফ পার্সোনেল অফিসারের পক্ষে সেই আবেদন অনুমোদন দেন জুনিয়ার পার্সোনেল অফিসার হযরত আলী তালুকদার। এরপর ২০২০ সালের ৮ জুন চিফ পার্সোনেল অফিসারের পক্ষে তৎকালীন জুনিয়র পার্সোনেল অফিসার এস এম সেলিম উদ্দীন মামুন ইসলামের এলএপি নিয়মিতকরণ মঞ্জুর করেন।
নিরপত্তাপ্রহরী মামুন ইসলামের চাকরির নামে প্রতারণা ও কারাবাসের বিষয়টি স্বীকার করেছেন ডিভিশনাল মেডিকেল অফিসার (ডিএমও) ডা. এস এম মারুফুল আলম। তিনি বলেন, ওই সময় পত্রিকার সংবাদ হলে বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। কিন্তু জনসংযোগ দপ্তর থেকে লিখিতভাবে বিষয়টি তাকে অবগত করা হয়নি। ফলে এটি আমলেই নেননি তিনি।
তিনি আরও বলেন, কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে মামুন পারিবারিক ছুটির আবেদন করেন। সেই আবেদন সিএমও এবং সিপিও দপ্তর গ্রহণ করে যোগদানের সুপারিশ করে। ফলে তাকে যোগদান করানো হয়।
এ বিষয়ে জুনিয়র পার্সোনেল অফিসার হযরত আলী তালুকদার বলেন, ওই সময় তার কাছে মামুনের কারাগারে কাটানোর কোনো প্রমাণ ছিল না। ফলে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে যোগদানের আদেশ হয়।
তৎকালীন জুনিয়র পার্সোনেল অফিসার এস এম সেলিম উদ্দীন এখন অবসরজনিত ছুটিতে। বিধি ভেঙে রেলকর্মীর ছুটি অনুমোদনের বিষয়ে জানতে তার মোবাইলে কয়েক দফা চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
তবে চিফ পার্সোনেল অফিসারের দায়িত্বে থাকা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন না। কিন্তু ঘটনার আংশিক শুনেছিলেন। তবে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে মামুন ইসলামের চাকরিতে যোগদান কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এটা নিয়মের মধ্যেই পড়ে না বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চৌকিদার মামুন বলেন, আমার কোনো দোষ নাই। আমি এলইপি ছুটির আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষ আমাকে ছুটি দিয়েছে। এর চেয়ে আরও বেশি কিছু জানতে চাইলে সামনাসামনি আসার প্রস্তাব দেন এ প্রতিবেদককে। তবে প্রতারণার বিষয়টি জানতে চাইলে রাগান্বিত হয়ে ফোন কেটে দেন অভিযুক্ত মামুন।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, অভিযোগ সামনে আসায় সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অফিসারকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি এখনো প্রতিবেদন দেননি। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এনএ