৬৫ দিন পর নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার (২৩ জুলাই) মধ্যরাত থেকে সাগরে মাছ ধরতে যাবেন জেলেরা। জাল, দড়ি, মাঝি-মাল্লা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে প্রস্তুত বরগুনার পাথরঘাটা মৎস অবতরণ কেন্দ্রের মাছধরার ট্রলারগুলো। এতে স্বস্তি ফিরেছে জেলে পরিবারগুলোয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় জেলেরা। কেউ জাল-দড়ি ট্রলারে তুলছেন, কেউ জ্বালাতি তেল সরবারহ করছেন। কেউ আবার ট্রলার ধুয়েমুছে পরিষ্কার করছেন। এ নিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে পাথরঘাটা মৎস অবতরণ কেন্দ্রের ট্রলার ঘাটে। 

৬৫ দিন সাগরে যেতে না পারায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন তালিকা অনুযায়ী দুই ধাপে বরগুনায় ২৭ হাজার ২৭৭ জন ১ হাজার ৫২৭ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন চাল-সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখন নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ায় সাগরে যাত্রা শুরু করছেন তারা। সমুদ্রে জালে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়বে, এমনটা আশা ট্রলার-মালিক ও জেলেদের।

তবে জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির তথ্যমতে, জেলায় নিবন্ধিত ৪২ হাজার ৭২৩ জেলে কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা পাননি। তবু তারা মাছ পেয়ে সেই কষ্ট ভোলার অপেক্ষা করছেন।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেলেরা বলেন, এই ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাগরে যেতে পারিনি। অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোভাবে বেঁচে ছিলাম। ৮৬ কেজি চাল পেয়েছি। তবে শুধু চাল খেয়ে তো আর বেঁচে থাকা যায় না। অবশেষে নিষেধাজ্ঞা শেষ হলো। সাগরে যাচ্ছি। বেশ খুশি লাগছে। আমরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ নিয়ে ফিরব ইনশা আল্লাহ।

আবুল হোসেন নামে এক জেলে বলেন, ট্রলার মেরামতের কাজ শেষ। এখন বাজার-সদাই করাও শেষ। আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ। রাতে সাগরে রওনা হব। আশা করছি বেশি মাছ পাব, অভাব দূর হবে।

ট্রলার মালিক আসমত আলী বলেন, দীর্ঘদিন আমার ট্রলার তীরে পড়ে থাকায় ভাঙন ধরেছে। সেসবের মেরামত শেষ করেছি, এখন সাগরে যাওয়ার অপেক্ষা। সরকারের ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা সঠিক ছিল বলে মনে করছি। এ কারণে সাগরে মাছ বাড়বে। আশা করছি, জেলেরা এখন বেশি মাছ নিয়ে ফিরবেন।

আরেক ট্রলার মালিক ইকবাল হোসেন মানিক বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিলেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। সরকারের নির্দেশনা মানতে এ কয় দিনে আমরা সাগরে ট্রলার পাঠানো থেকে বিরত ছিলাম। তবে এটা সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছি। কারণ এ নিষেধাজ্ঞায় সাগরে মাছ বেড়েছে। আশা করছি, জেলেরা এবার বেশি ইলিশ নিয়ে ফিরবে।

জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, কষ্ট করে হলেও নিষেধাজ্ঞার সব নিয়ম পালন করেছেন পাথরঘাটার জেলেরা। বরগুনায় মোট জেলে রয়েছেন প্রায় ৭০ হাজারের মতো। এর মধ্যে নিবন্ধিত ২৭ হাজার ২৭৭ জন জেলেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ৪২ হাজার ৭২৩ জেলে কোনো সহায়তা পাননি। তবু সবাই তাকিয়ে আছেন সাগরের দিকে। সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়লেই সবার কষ্ট সফল হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে শতাধিক ট্রলার প্রস্তুত রয়েছে। মধ্যরাত থেকেই তারা সাগরের উদ্দেশে রওনা হবে। আশা করি জেলেরা আশানুরূপ মাছ নিয়ে ফিরবেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় জেলার ২৭ হাজারেরও বেশি জেলেকে ১ হাজার ৫২৭ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন চাল সহায়তা দেওয়া হয়। আজ রাতে সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে। এখন সাগরে মাছ ধরায় আর বাধা নেই। আশা করা যায় জেলেরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ নিয়েই তীরে ফিরতে পারবে।

প্রসঙ্গত, দেশের সমুদ্রসীমায় মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে ৬৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর আগে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল। এরই অংশ হিসেবে গত ২০ মে মধ্যরাত থেকে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। আজ শেষ হবে এই নিষেধাজ্ঞা। 

খান নাঈম/এনএ