পাক বাহিনীর হাতে নিহত বাবার শহীদ মর্যাদা চান ছেলেরা
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের একজন সংগঠক ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ডা. গোলাম রব্বানীকে ১৯৭১ সালের ২৫ মে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। এরপর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে হানাদাররা। স্বাধীনতার দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও গোলাম রব্বানীর নাম শহীদ তালিকাভুক্ত হয়নি এবং শহীদের মর্যাদাও পাননি।
দেশ স্বাধীন হলে সহমর্মিতা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ১ হাজার টাকা অনুদান পাঠিয়েছিলেন গোলাম রব্বানীর স্ত্রীর কাছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৩১ জুলাই) দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে গোলাম রব্বানীর নাম শহীদদের তালিকাভুক্ত করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবি করার সময় এসব কথা বলেন তার ছেলে রফিকুল ইসলাম মিলন।
গাবতলী উপজেলা তেলিহাটা গ্রামের নিহত ডা. গোলাম রব্বানীর ছেলে রফিকুল ইসলাম মিলন লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ও আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। অত্র এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সুসংগঠিত করেছিলেন আমার বাবা। তৎকালীন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. জাহেদুর রহমান ও প্রয়াত সাবেক সাংসদ সদস্য হাছেন আলী সরকারের সহকর্মী ছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
আমার বাবা ১৯৭১ সালের ২৫ মে তারিখে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের এক গোপন বৈঠক শেষে বাড়িতে ফেরে খাওয়াদাওয়া করার সময় তৎকালীন গাবতলী থানার ওসি অবাঙালি সবকদ হোসেন, এএসআই আবুল ফজল সিদ্দিকসহ বেশ কিছু পুলিশ সদস্য পাক বাহিনীর নির্দেশে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে। এরপর আমার বাবাকে এবং একই এলাকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানি মেজরের হাতে সোপর্দ করেছিল। গ্রেপ্তারের রাতে এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ পুলিশের হাত থেকে আমার বাবাকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করলে সুখানপুকুর বন্দরে অবস্থানরত পাক বাহিনীরা উপর্যুপরি ফাঁকা গুলি ছুড়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। পরের দিন দুপুরে পুনরায় আমাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বাবার ছবিসহ তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুড়ে ফেলে এবং সুখানপুকুর বন্দরে ৩৬ জন ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছিল পাক বাহিনীর সদস্যরা।
আমার বাবা নিহত হওয়ার খবরে শোকাভিভূত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার মা মরহুমা মাহমুদা বেগমকে সমবেদনা জানিয়ে পত্র দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। সঙ্গে এক হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। আমার পরিবারে অসহায় অবস্থা দেখে তৎকালীন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. জাহেদুর রহমান আমার মাকে তার ফ্যাক্টরিতে সাময়িক চাকরি দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার বাবাকে তুলে নিয়ে গিয়ে পাক বাহিনীর সদস্যরা হত্যা করল। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তার নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবার মৃত্যুর পর আমরা তিন ভাই-বোন খুবই ছোট ছিলাম। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে না পারায় দীর্ঘদিন পর ২০০৯ সালে বাবার নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্তকরণের জন্য আবেদন করেছিলাম। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সচিব মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক। তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, আমাদের বাবার নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় স্থান দিয়ে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিন। অন্যথায় আমার বাবার নাম চিরতরে মুছে যাবে। যেন এলাকার সবাই তাকে মনে রাখেন।
এ সময় ডা. গোলাম রব্বানীর ছোট ছেলে রবিউল হাসান মামুন উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহমুদুল আলম নয়ন ও সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন মিন্টুসহ জাতীয় ও স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এনএ