দিনাজপুর রেলস্টেশনে টিকিট ছাড়া ঢুকতে গিয়ে দিনাজপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত একজনকে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রেলওয়ে কর্মচারী ও নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (০৩ আগস্ট) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা পার্বতীপুরগামী কাঞ্চন এক্সপ্রেস এবং শান্তাহার থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল। 

এ সময় দিনাজপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহ-নেওয়াজ রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করার সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার কাছে টিকিট দেখতে চায়। তিনি টিকিট না দেখিয়ে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটলে রেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজন তাকে স্টেশনের একটি রুমে আটক রাখে।

এ সময় খবর পেয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অন্যান্য কর্মচারীরা এসে তাদের উপ-পরিচালককে জোরপূর্বক ছাড়িয়ে নিতে চাইলে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এ সময় মাদকের লোকজন রেলের কর্মচারীদের ওপর চড়াও হলে তিনজন আহত হয়।

আহতরা হলেন- রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মাসুদ পারভেজ (৩০), টিকিট কালেক্টর রিপন মিয়া (২৭) ও পোর্টার ম্যান মো. নাহিদ হাসান (৩২)। তবে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন মাসুদ পারভেজ। অন্য দুইজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী আরএনবির ইনচার্জ সারওয়ার আহমেদ বলেন, দুটি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো অবস্থায় রেলওয়ের স্টাফরা চেকিং করছিল। এ সময় মাদকের ডিডি টিকেটবিহীন অবস্থায় প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে চাইলে স্টাফরা তাকে টিকেট ছাড়া ঢুকতে বাধা দেয়। এতে তিনি টিসি (টিকেট কালেক্টর) রিপনকে ধাক্কা দিলে রিপন তাকে তার রুমে আটক করে রাখে। এ সময় মাদকের ডিডি তার স্টাফদের ফোন করে ডেকে আনেন। ৫-৬ মিনিটের মধ্যে ৮-৯ জন মোটরসাইকেলযোগে এসে রেলের স্টাফদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় তারা মাসুদ পারভেজের মাথা ফাটিয়ে দেয় ও টিসির কাপড়চোপড় ছিঁড়ে ফেলে।

দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নারগিস জানান, আমরা দাঁড়িয়ে সবার টিকিট চেক করছিলাম। এ সময় তিনি বাধা অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকতে থাকেন। তাকে টিকিটের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি টিকিট করেননি বলে জানান। এ সময় টিকিট করে ভেতরে ঢুকতে বললে তিনি ধাক্কা দেন। পরে তাকে একটি রুমে আটকে রাখতে বলি। পরে উনি ফোন করেছেন কি না জানি না। ওনার লোক এসে মারামারি শুরু করেন। তিনি আগেও টিকিট নিয়ে ঝামেলা করেছিলেন।

তবে স্টেশন সুপার নারগিসের অভিযোগ অস্বীকার করে শাহ-নেওয়াজ বলেন, অফিসের এক সদস্যকে কাউন্টারে টিকিট কাটতে পাঠিয়ে আমি স্টেশনের প্রধান ফটক দিয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে যাই। বিষয়টি গেটে দাঁড়িয়ে থাকা স্টেশন মাস্টারকে জানানো হয়। কিন্তু তারা দুর্ব্যবহার করা শুরু করে। তবে ফোন করে অন্য সদস্যদের ডেকে আনার বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।

স্টেশন সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, এত বড় একজন কর্মকর্তার আইনের প্রতি তার শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত ছিল। তিনি যে কাজটি করেছেন তা মোটেও ঠিক হয়নি।

দিনাজপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল হক ভূইয়া বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

ইমরান আলী সোহাগ/এসপি