স্বাধীনতার আগ থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালিপাড়ার উপজেলার তিনটি গ্রাম। প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হতো তিন গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে। জনদুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০২০ সালে সোনাখালী খালের ওপর জোড়াসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এই সেতু নির্মাণ হওয়ায় কষ্ট লাঘব হয়েছে তিন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের। পাল্টে গেছে জীবনযাত্রার মান। আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এসেছে।

টুঙ্গিপাড়া ও কোটালিপাড়া উপজেলার গোপালপুর, ডুমরিয়া এবং পিঞ্জরি ইউনিয়ন। এই তিন ইউনিয়নের সীমান্তে তিনটি গ্রাম সোনাখালী, পূর্ব সোনাখালী ও তারইল। এই তিনটি গ্রামের সীমান্ত দিয়ে বয়ে গেছে সোনাখালী খাল। তিন ইউনিয়নের তিনটি গ্রামকে একত্রিত করতে এই সোনাখালী খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে জোড়া সেতু। সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৫ মিটার দৈর্ঘ্য একটি সেতু নির্মাণ করে টুঙ্গিপাড়ার গোপালপুর ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রাম থেকে কোটালীপাড়ার পূর্ব সোনাখালী গ্রামের সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ৪২ মিটার দৈর্ঘ্য আরও একটি সেতু সংযুক্ত হয়েছে ডুমরিয়া ইউনিয়নের তারইল গ্রামের সড়কের সঙ্গে। 

জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও এই তিনটি গ্রামের মানুষের দুঃখ-কষ্টের সীমা ছিল না। যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকার কারণে নিজেদের জমিতে ফলানো কৃষিপণ্য, মাছসহ উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য সময় মতো বাজারে সরবরাহ করতে পারত না। মালামাল মাথায় করে ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো অথবা নৌকায় পার হতে হতো। অসুস্থ রোগীদের নিয়ে পড়তে হতো চরম ভোগান্তিতে। সেতুর অভাবে সময় মতো হাসপাতালে না নিতে পাড়ায় অনেক রোগী মারাও যেত।

তবে জোড়া সেতু নির্মাণের ফলে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হয়েছে। পাশাপাশি এলাকার অর্থনীতির চাকা সচল হয়ে উঠেছে। বদলে যেতে শুরু করেছে তিনটি গ্রামের হাজারো মানুষের জীবনযাত্রার মান। 

তারাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অসিম কুমার বর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে আমাদের এই খাল পাড়ে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নৌকার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। সময় মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারতাম না। চরম দুর্ভোগে পড়তে হতো। সেতুটি হওয়ায় এলাকাবাসী ও  আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।

পূর্ব সোনাখালী গ্রামের এক কৃষক বলেন, এই সেতু দুটি হওয়াতে আমরা খুব সহজে আমাদের নিজের ক্ষেতে ফলানো ফসল খুব তাড়াতাড়ি বাজারে নিতে পারছি। সঠিক সময়ে বাজার ধরতে পারায় ন্যায্য দাম পাচ্ছি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিনটি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষের দুঃখকষ্ট লাঘবে ওই এলাকায় দুটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিই। সেতু দুটি নির্মাণের ফলে ওই এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে। ওই অঞ্চলটি কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চল। ওই অঞ্চলে ব্যাপক কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়। সেখানকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলো সহজে অল্প সময়ের মধ্যে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারছেন। এতে ওই এলাকার কৃষক এবং মাছচাষিরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন।  

আরএআর