কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তার সমাজের জন্য শঙ্কার হয়ে উঠেছে
খুলনা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির আগস্ট মাসের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (১৪ আগস্ট) সকালে জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদারের সভাপতিত্বে তার সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় পুলিশ সুপার মো. মাহবুব হাসান বলেন, সময়ের সঙ্গে অপরাধের ধরণ বদলাচ্ছে। জেলায় মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৮টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে এবং এ কাজে জড়িতদের আটক করা হয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমে জুয়া খেলা প্রতিরোধে পুলিশ কাজ করছে। নতুন প্রজন্মের তরুণ ও যুবকদের অনলাইন আসক্তি বন্ধে স্কুল-কলেজে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
বিজ্ঞাপন
সভায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের খুলনা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, তার দপ্তর গত জুলাই মাসে জেলায় ২২৮টি অভিযান পরিচালনা করে ৩৫টি মামলা দায়ের করে। একই সময়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ২৫৮টি অভিযান ও জেলা পুলিশ ১৭১টি অভিযান পরিচালনা করে। তিন সংস্থা মিলে ২৭ কেজি গাঁজা, চার হাজার ছয়শ ৬৬ পিস ইয়াবা, ৫০ বোতল ফেন্সিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সেমিনার ও স্কুল-কলেজে মোটিভেশনাল কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী ও বিআরটিএ-এর সমন্বয়ে সড়ক-মহাসড়কে লাইসেন্সবিহীন যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। খুলনা বিআরটিএ- এর অধীন ৩৮ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড প্রিন্টিং প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যা আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়।
বিজ্ঞাপন
সভায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা খুলনার ব্যুরো প্রধান এসএম জাহিদ হোসেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালানোর অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে তিনি সমগ্র জেলায় কিশোর গ্যাং এর অপতৎপরতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, গত মাসে জেলায় মাদকের বিরুদ্ধে তিনটি বড় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। মাদক সংশ্লিষ্ট মামলা দ্রুত নিস্পত্তির জন্য মামলার সাক্ষীদের নিয়মিত কোর্টে হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যান্য অপরাধের তুলনায় সমাজে মাদক এবং নারী-শিশু নির্যাতন সংশ্লিষ্ট অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তার সমাজের জন্য শঙ্কার বিষয় হয়ে উঠেছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পুলক কুমার মণ্ডল সভায় গত মাসে খুলনা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। খুলনা জেলা অধিক্ষেত্রে গত জুলাই মাসে ডাকাতি ১টি, চুরি ৬টি, খুন ২টি, অস্ত্র আইন ২টি, ধর্ষণ ২টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৫টি, নারী ও শিশু পাচার ২টি, মাদকদ্রব্য ৬১টি এবং অন্যান্য ৯৫টিসহ মোট ১শ ৮৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যা গত জুন মাসে দায়ের হওয়া মামলার চেয়ে ১টি কম।
খুলনা মহানগরী অধিক্ষেত্রে জুলাই মাসে চুরি ১২টি, খুন ২টি, দ্রুত বিচার ১টি, ধর্ষণ ৩টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১১টি, মাদকদ্রব্য ৭১টি এবং অন্যান্য ২০টিসহ মোট একশত ২২টি মামলা দায়ে করা হয়েছে, যা বিগত জুন মাসে দায়ের হওয়া মামলার চেয়ে ২২টি কম।
সভায় জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ, সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ, প্রেস ক্লাবের সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা অংশ গ্রহণ করেন।
মোহাম্মদ মিলন/আরআই