শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি, পঞ্চগড়ে পাথর-বালু কেনাবেচা বন্ধ
শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানানোয় কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য পাথর-বালু কেনাবেচা বন্ধ করে দিয়েছেন পঞ্চগড়ের ব্যবসায়ীরা। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন জেলার ১০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক।
রোববার (২৮ আগস্ট) জেলার বাংলাবান্ধা, তিরনইহাট, ভজনপুর, তেঁতুলিয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা দালাল অফিসে (শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়) কর্মহীন হয়ে বসে রয়েছেন। পাথর-বালু বেচাকেনা বন্ধ থাকায় স্ট্যান্ডে কোনো ট্রাকও তেমন দেখা যায়নি।
বিজ্ঞাপন
গত শুক্রবার (২৬ আগস্ট) রাতে লোড-আনলোড শ্রমিকরা তাদের মজুরি সিএফটি প্রতি ৪ টাকা বৃদ্ধির দাবি করলে তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুরে পাথর-বালু ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে জেলার পাথর-বালু ব্যবসায়ী যৌথ ফেডারেশন শনিবার (২৭ আগস্ট) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পাথর-বালু কেনাবেচা বন্ধ ঘোষণা করে।
শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, পঞ্চগড়ে মাটির ভূ-গর্ভস্থ ও নদীর পাথর-বালু দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে। এ পাথর-বালু লোড-আনলোড কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে জেলার ১০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক। তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতি ঘনফুট (সিএফটি) পাথর ২ টাকা ৮০ পয়সায় লোড-আনলোড করে আসছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জেলা ট্রাক, ট্রাক্টর, ট্যাংক-লরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা মটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নসহ সংগঠনগুলো তাদের শ্রমিকদের সামান্য মজুরি বাড়িয়ে দেন।
বিজ্ঞাপন
শ্রমিকরা বলছেন, সিএফটি প্রতি ২ টাকা ৮০ পয়সায় লোড-আনলোড করলে বর্তমানে ৩৫০-৫০০ টাকা হাতে আসে। এ টাকায় তাদের সংসার চলছে না। এ জন্য তারা পাথর-বালু ব্যবসায়ীদের কাছে সিএফটিতে সাড়ে ৫ টাকা বৃদ্ধির জন্য দুই মাস আগে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেন। কিন্তু প্রশাসন থেকে কোনো পদক্ষেপ না আসায় গত ২৫ আগস্ট শ্রমিক সংগঠনগুলো লোড-আনলোডে সিএফটি প্রতি ৪ টাকা করার দাবি জানালে ব্যবসায়ীরা তা আমলে না নিয়ে হঠাৎ শনিবার থেকে পাথর-বালু কেনাবেচা বন্ধ করে দেন। এতে করে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
বাংলাবান্ধা লোড ইউনিয়নের শ্রমিক নেতা নাজিরুল ইসলাম, তিরনইহাটের মানিক মিয়া, তেঁতুলিয়ার রঞ্জু মাসুদসহ ভজনপুরের কয়েকজন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে পাথর-বালু লোড-আনলোড করে সিএফটি প্রতি ২ টাকা ৮০ পয়সায় সংসার চলছে না। সব কিছুর দাম বেড়েছে। তাহলে আমাদের মজুরি বাড়বে না কেন। এ জন্য দুই মাস আগে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে মজুরি বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সাড়া না পাওয়ায় গত ২০ আগস্ট আমরা ব্যবসায়ীদের আলটিমেটাম দেই ২৫ তারিখ থেকে ৪ টাকা সিএফটিতে লোড-আনলোডে কাজ করব। এ কথা জানার পর তারা হঠাৎ করেই আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে পাথর-বালু বেচাকেনা বন্ধ করে দেন। এতে দুদিন ধরে বেকার হয়ে পড়েছি। বাড়িতে বাজারও ঠিক মতো নিতে পারছি না।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা পাথর-বালু ব্যবসায়ী ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন -অর রশিদ লিটন বলেন, ডিসি অফিসে বসে আমাদের সঙ্গে শ্রমিকদের বৈঠকে লোড-আনলোডে সিএফটিতে ২ টাকা ৮০ পয়সার চুক্তি করা হয়। এভাবেই চলছিল ছিল। এর মধ্যে হুট করে শ্রমিকরা ২৫ আগস্ট ২ টাকা ৮০ পয়সার জায়গায় ৪ টাকা করে দাবি করে। তা মানতে না পারায় ব্যবসায়ী সংগঠন ও যৌথ ফেডারেশনের সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বেচাকেনা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা পাথর-বালু যৌথ ফেডারেশনের সভাপতি হাসিবুল হক প্রধান বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা না বলে শ্রমিকরা প্রতি সিএফটি ৪ টাকা ঘোষণা করেছে। তারই প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের সর্বসম্মতিক্রমে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য পাথর-বালু বেচাকেনা বন্ধ করে দিয়েছি। তবে আগামীকাল সোমবার (২৯ আগস্ট) জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের ডেকেছেন। সেখানে এ নিয়ে আলোচনা হবে।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির একটি আবেদন আমরা পেয়েছি। এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। চলমান সংকট নিয়ে আমরা উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। আশা করি আলোচনার মাধ্যমেই দ্রুত এর সুষ্ঠু সমাধান হবে।
আরএআর