পিরোজপুর জেলা পরিষদ নির্বাচন
৭৪৭ ভোটারের ৭০৪ জনই চান মহিউদ্দিন মহারাজকে
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৭ অক্টোবর দেশের ৬১টি জেলায় জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জেলার প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, বেশির ভাগ জেলাতেই বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক, যারা এর আগে গত পাঁচ বছর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারাই দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। তাদের তালিকা কেন্দ্রে রয়েছে।
আগামী জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন মহারাজ। চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর পিরোজপুরসহ দেশের ৬১টি জেলায়, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদেরই জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। ১৭ এপ্রিল থেকে মহিউদ্দিন মহারাজ পিরোজপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিজ্ঞাপন
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন পিরোজপুর জেলার সকল জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নেন মহিউদ্দিন মহারাজ। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিদের তিনি উন্নয়নমূলক কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত করায় পিরোজপুরের গ্রাম পর্যায়ে জেলা পরিষদের উন্নয়ন পৌঁছে গেছে। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের মাঝে মহিউদ্দিন মহারাজের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকায় আগামী নির্বাচনকে ঘিরে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন পিরোজপুর জেলা পরিষদের ভোটাররা।
৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর জেলা। যেখানে জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছেন ৭৪৭ জন। এর মধ্যে ৭০৪ জন ভোটারই জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক মো. মহিউদ্দিন মহারাজের পক্ষে স্বাক্ষর দিয়ে লিখিতভাবে সমর্থন জানিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্বাক্ষর সম্বলিত একটি বই পাঠিয়েছেন বলেও জানা যায়।
বিজ্ঞাপন
আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকেন। তাদের প্রত্যক্ষ ভোটেই নির্বাচিত হন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
পিরোজপুর-১ সদর আসনের নাজিরপুর উপজেলায় ৯টি ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধি আছেন ১২০ জন। এই উপজেলার সকল ভোটার তার পক্ষে স্বাক্ষর দিয়ে সমর্থন জানিয়েছেন। নেছারাবাদ উপজেলায় ইউনিয়ন ১০টি ও ১টি পৌরসভা। যেখানে মোট ভোটার ১৪৬। যার মধ্যে মহিউদ্দিন মহারাজের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন ১৪০ জন। পিরোজপুর সদর উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১০৭ জন ভোটারের মধ্যে স্বাক্ষর দিয়ে সমর্থন করেছেন ৭৯ জন। পিরোজপুর-২ আসনের ভান্ডারিয়া সদর উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৯২ জন ভোটারের সকলেই সমর্থন করেছেন তাকে।
কাউখালী এবং ইন্দুরকানী উপজেলায় ৫টি করে ইউনিয়নের ৬৮ জন করে ভোটারের সকলেই স্বাক্ষর দিয়ে মহিউদ্দিন মহারাজকে সমর্থন জানিয়েছেন। এছাড়া পিরোজপুর-৩ আসনের মঠবাড়িয়া উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নের ১৪৬ জন ভোটারের মধ্যে ১৩৭ জনই স্বাক্ষর দিয়ে সমর্থন জানিয়েছেন মহারাজকে। মঠবাড়িয়া পৌরসভা থাকলেও সর্বশেষ সংশোধনী আইন অনুযায়ী সরকার কর্তৃক পৌর পরিষদ বিলুপ্ত হওয়ায় এখানকার ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় আনা হয়নি।
লিখিত সমর্থন দেয়া বইটিতে দেখা যায়, পিরোজপুর সদর উপজেলার ২৮ জন, নাজিরপুরের ৬ জন ও মঠবাড়িয়া উপজেলার ৯ জন ছাড়া বাকি ৯৪.২৫ শতাংশ ভোটারই মহিউদ্দিন মহারাজের পক্ষে অগ্রিম সমর্থন জানিয়েছেন।
এদিকে লিখিতভাবে সমর্থনের পাশাপাশি মহিউদ্দিন মহারাজকে পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই- এমন প্রত্যাশা জানিয়ে বিভিন্ন উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা তার পক্ষে ব্যানার, পোস্টার ও বিলবোর্ড লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কেন লিখিতভাবে আগেই সমর্থন জানালেন এমন প্রশ্ন করা হলে নাজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা অমূল রঞ্জন হালদার জেলা পরিষদের প্রশাসক মহিউদ্দিন মহারাজকে জেলা আওয়ামী লীগের আগামীর কাণ্ডারি উল্লেখ করে বলেন, শুধু জনপ্রতিনিধি না, যে কেউ কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে মহারাজ তা সমাধান করে দেন। তাই তাকে সমর্থন দিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন তারা।
কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আবু সাঈদ মিয়া মনু বলেন, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যে কোনো বরাদ্দ বা উন্নয়নমূলক কাজ করা সম্ভব এ বিষয়টিই তারা মহিউদ্দিন মহারাজ চেয়ারম্যান হওয়ার আগে জানতেন না।
পিরোজপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান এস এম বায়েজীদ হোসেন বলেন, মহিউদ্দিন মহারাজের কোনো বিকল্প না থাকায় তারা অগ্রিম তাকে লিখিতভাবে সমর্থন দিয়েছেন।
মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান রাহাত বলেন, তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর জনপ্রতিনিধিদের বিভক্তি দূর করে এক ছাতার নিচে আনতে সক্ষম হয়েছেন। তাই মহিউদ্দিন মহারাজকে দলীয় সমর্থন দেওয়ার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন।
অগ্রিম সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে মহিউদ্দিন মহারাজের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভোটারদের (জনপ্রতিনিধি) কাছ থেকে এমন ভালোবাসা ও স্বীকৃতি পাওয়া নিশ্চয়ই সৌভাগ্যের। দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি সবসময়ই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে পিরোজপুরের সকল ইউনিয়নের গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করেছেন। যেহেতু তার সময়ে বৈশ্বিক মহামরি করোনা হানা দিয়েছিল, তাই তিনি ব্যক্তি পর্যায়ে ও সরকারিভাবে চেষ্টা করেছেন যেন পিরোজপুরের কোনো নাগরিক খাওয়ায় কষ্ট না পান। আগামী নির্বাচনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে পারলে তিনি পিরোজপুরকে দেশের মধ্যে মডেল জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
আরএআর