পটুয়াখালী সদর উপজেলার পূর্ব বাদুরা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. নাজিম উদ্দিন সিকদার (৪৮)। শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজের পরিত্যক্ত ৪৩ শতাংশ জমিতে লেবুবাগান করে বছরে লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করছেন। ইতোমধ্যে গ্রামের বেকার যুবকরা তাকে অনুসরণ করতে শুরু করেছেন।

জানা গেছে, পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বাদুরা গ্রামের মো. আফাজ উদ্দিন সিকদারের ছেলে মো. নাজিম উদ্দিন সিকদার। তিনি তার এক ছাত্রের লেবু চাষের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ২০২০ সালের জুন মাসে নিজ বাড়ির পশ্চিম পাশের ৪৩ শতাংশ জমিতে ৩৩১টি কাগজি লেবু ও ৭০টি উচ্চ ফলনশীল বারোমাসি চায়না-৩ (সিডলেস) জাতের লেবুর চারা রোপণ করেন। লেবুর চারা, বাগানে বেড়া দেওয়া এবং শ্রমিকের মজুরি বাবদ তার মোট খরচ হয় ১ লাখ টাকা। ২০২২ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বাগান থেকে লেবু এবং লেবুর চারা বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে ২০ হাজার, দ্বিতীয় ধাপে ৩৫ হাজার, এভাবে প্রায় লাখ টাকার লেবু ও চারা বিক্রি করেছেন।

লেবু চাষে তেমন শ্রম দিতে হয় না। একবার জমি প্রস্তুত করতে পারলে ফলন পাওয়া যায় অনেক বছর পর্যন্ত। তাছাড়া এর রোগ বালাই অনেক কম হয়। সহজে যে কেউ লেবু চাষ করতে পারেন। বর্তমানে নাজিম উদ্দিন সিকদারের বাগানে থোকায় থোকায় লেবু ধরে আছে। এক দিকে লেবু উঠানো হচ্ছে অন্যদিকে প্রচুর ফুল আসছে। আবার কলম তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে।

বিশেষ করে নাজিম উদ্দিন সিকদারের বাগানে লাগানো লেবুতে বিচি কম থাকে, সুগন্ধি ভালো পাওয়া যায়, চামড়া পাতলা এবং প্রচুর পরিমাণে রস থাকে। যার কারণে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। তার কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ এ জাতের লেবুর চারা সংগ্রহ করছেন। তাছাড়া যে কেউ যোগাযোগ করলে তিনি নিজ উদ্যোগে চারা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। 

তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষি সংশ্লিষ্টরা তার মুঠোফোন ০১৭১৪৯০৬৩৫৭ নম্বরে কথা বলে চারা গ্রহণ করছেন। তার বাগানের ব্যাপক পরিচিতি পাওয়ায় এলাকার শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার যুবকরা তার সহযোগিতা নিয়ে লেবুবাগান তৈরি করেছেন। 

কৃষি উদ্যোক্তা অধ্যক্ষ নাজিম উদ্দিন সিকদার বলেন, প্রথমে যখন লেবু চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে শুরু করি, তখন এলাকার মানুষ আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেন। তারা বলেন, আমি টাকা ও সময় নষ্ট করছি। এভাবে লেবুর চাষ করলে ভালো হবে না। আস্তে আস্তে যখন গাছ বড় হতে শুরু করে, গাছে ফুল আসা শুরু করে, লেবু বিক্রি করা শুরু করেছি, তখন তারাই আমার কাছ থেকে লেবু কিনতে আসে। প্রথম বছরেই আমার খরচের টাকা ওঠে গেছে। এখন গাছে যা আছে সব লাভের অংশ।

তিনি আরও বলেন, এখন লেবুর পাইকারি দাম বাজারে ১.৫০ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত। দাম কম তাই অল্প অল্প করে লেবু তোলা হচ্ছে। তবে সামনের রমজান মাসে সিডলেস লেবুর ফলনটা পাওয়া যাবে। তখন লেবুর চাহিদা থাকবে আবার দামও ভালো পাওয়া যাবে। লেবু বিক্রির পাশাপাশি ১ হাজারের মতো লেবুর কলম বিক্রি করছি। প্রতি পিস কলম বানাতে ৫-৭ টাকা খরচ হলেও বিক্রি হয় ৩০ টাকা করে। এতে করে দুজন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে আমার এখানে।

লেবুবাগানে কর্মরত কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, মূলত বাগানের ঘাস পরিষ্কার ও লেবুর কলম বানাতে হয় আমাকে। প্রথম দিকে একটু কাজ বেশি থাকলেও এখন অনেক কম কাজ করতে হয়। আবার এই লেবু বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। মোটামুটিভাবে বাগানের মালিক অনেক লাভবান হয়েছে। শিক্ষক মানুষ অনেক ব্যস্ত থাকে। তারপরও এ রকম লেবুর বাগান করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করছে।

প্রতিবেশী নাসির হাওলাদার বলেন, ওনি যখন লেবুর চাষ শুরু করেন, আমরা হাসি-ঠাট্টা করেছি। তারপর দেখতেছি তিনি লেবুতে অনেক ভালো ব্যবসা করছেন। তার ভালো লাভ হচ্ছে। আমরা তার কাছ থেকে লেবু কিনে খাই। এখন আমরাও চিন্তা করছি তার কাছ থেকে কলম নিয়ে লেবুর বাগান করব।

পটুয়াখালী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মার্জিন আরা মুক্তা বলেন, পরিত্যক্ত জমিতে নাজিম উদ্দিন যে লেবুর বাগান করেছেন সেটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। বাগান শুরুর আগে আমরা তাকে সহযোগিতা করেছিলাম। এ রকম যদি নতুন কোনো উদ্যোক্তা লেবুর বাগান করতে চান, তাহলে আমরা অবশ্যই তাকে সহযোগিতা করব।

এসপি