গাজীপুরে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া বাসায় বসবাসকালে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় নারী পোশাক শ্রমিককে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তার প্রেমিক। ঘটনা ধামাচাপা দিতে মরদেহ ওয়ারড্রবে ভরে সড়কের পাশে ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে মরদেহ উদ্ধার করে। 

এ ঘটনার চার দিনের মাথায় হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন ও ঘটনায় জড়িত প্রেমিকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। 

নিহত পোশাক শ্রমিকের নাম ছামিনা খাতুন ওরফে সাবিনা (৩২)। তিনি কুড়িগ্রামের উলিপুর থানার দাড়ারপাড়ার আয়নাল হকের মেয়ে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শেরপুরের নকলা থানার মাওড়া এলাকার মর্তুজা আলীর ছেলে মো. রাকিবুল হাসান সুমন (২৪), সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ থানার চৌবাড়ী এলাকার মো.  শাহ আলম আকন্দের ছেলে শাহরিয়ার আকন্দ (১৯) ও টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার নব্বগ্রামের মো. দুলাল মিয়ার ছেলে মো. ফারুক হোসেন (২৪)। তাদের গত ১৭ অক্টোবর রাতে ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া বুধবার ভোরে অপর আসামি নাইমকে (২৭) গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থানার ধনকুরা এলাকার মো. সুনু মিয়ার ছেলে।

বুধবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ সব তথ্য জানান।

তিনি আরও জানান, প্রায় এক যুগ আগে নেত্রকোণার পূর্বধলা থানার দেউপুর এলাকার মোজাম্মেল হকের সঙ্গে সাবিনার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ১০ বছর সংসার করার পর প্রায় ২ বছর আগে তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। তারপর থেকে সাবিনা গাজীপুরে এসে একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন। এখানে সাবিনার সঙ্গে সুমনের প্রেমের সস্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা গাজীপুর মহানগরীর সাইনবোর্ড এলকায় বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। প্রায় দুই বছর এভাবে চলছিল। পরে সাবিনা বিয়ে করার জন্য সুমনকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু সুমন বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় কিছুদিন আগে স্থানীয় লোকজন দিয়ে সুমনকে মারধর করান সাবিনা। এরপর সুমন সাবিনাকে ছেড়ে তার আগের স্ত্রীর কাছে চলে যান।

সুমন চলে যাওয়ার র পর সাবিনা ফোন করে সুমনকে বিরক্ত করতেন ও বিয়ের জন্য চাপ দিতেন। এ কারণে সুমন তার সহযোগী নাঈমের সঙ্গে পরিকল্পনা করে গত ১৩ অক্টোবর রাতে সাবিনাকে নাঈমের গাজীপুর মহানগরীর বাসন এলাকার ভাড়া বাসায় ডেকে আনেন। সেখানে সাবিনার সঙ্গে সুমন শারীরিক সম্পর্ক করেন। পরে সাবিনা বিয়ের জন্য সুমনকে চাপ দিলে সুমন ও নাইমের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। সাবিনা তাদেরকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এ সময় নাঈম সাবিনার হাত চেপে ধরেন এবং সুমন গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে সাবিনাকে হত্যা করেন। পরে তারা বাসার নিকটবর্তী একটি ফার্নিচারের দোকান থেকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে কিস্তিতে একটি ওয়্যারড্রব কিনে এনে তার ভেতরে লাশ রেখে তালাবদ্ধ করে রাখেন।

মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, পরদিন ১৪ অক্টোবর সকালে লাশ সরানোর জন্য নাঈম তার ভায়রা ফারুক হোসেনকে পিকআপসহ আসতে বলেন। পরে ওয়ারড্রব পিকআপে উঠানোর জন্য সুমন ও নাঈম শাহরিয়ার আকন্দকে তার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসেন। সুমন, নাঈম, শাহরিয়ার ও ফারুক চারজন মিলে লাশ ভর্তি ওয়ারড্রব পিকআপে তুলে ১৪ অক্টোবর বিকেলে গাজীপুর সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানাধীন বিকেবাড়িতে একটি আবাসিক এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মনে করেছিল বাসা বদল করার জন্য হয়ত ওয়্যারড্রব এনে রেখেছে। কিন্তু পরে রাত ১২টার দিকে সন্দেহ হলে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ রাত দেড়টার দিকে ওয়ারড্রবের তালা ভেঙে মরদেহ উদ্ধার করে। পরে পিবিআই তার পরিচয় শনাক্ত করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই জসিম উদ্দীন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

শিহাব খান/আরএআর