নাটেশ্বর প্রত্নস্থানে একাদশ শতকের একটি বৃহৎ এবং সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স

মুন্সিগঞ্জে সদর উপজেলার রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বুধবার (৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি এসব পরিদর্শন করেন। 

পাঁচ মাসব্যাপী খননে যেসব প্রত্নবস্তু মিলেছে সেসবও ঘুরে দেখেন প্রতিমন্ত্রী। সেখানে প্রায় ১০ একর ঢিবিতে উৎখনন কাজ চলছে। এ সময় বিক্রমপুরী বৌদ্ধবিহার প্রত্নস্থান জাদুঘরের উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। 

ওই স্থানে কয়েক বছর যাবত খনন কাজ চলছে। খননে বেরিয়ে এসেছে হাজার বছর আগের মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা সমৃদ্ধ এক কমপ্লেক্স। যেখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও ছিল।

বিক্রমপুরী বৌদ্ধবিহার প্রত্নস্থান জাদুঘরের উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ

পরে নাটেশ্বরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক (গবেষণা) ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নাটেশ্বর প্রত্নস্থানে দশম-একাদশ শতকের একটি বৃহৎ এবং সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স ছিল। যা বাংলাদেশে প্রথম। বিগত বছরের অন্যতম আবিষ্কার বৃহৎ আকারের নান্দনিক কেন্দ্রীয় অষ্টকোণ আকৃতি স্তূপ। এটির চারপাশের চারটি স্তূপ হলো ঘর। প্রতীকী স্থাপত্যগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুটি বৃহৎ আকারের অষ্টকোণ আকৃতির স্তূপ, স্মারক কুঠুরি, সুরক্ষা প্রাচীরের অংশ, নকশা করা ইট। অষ্টকোণ আকৃতির স্তূপের কেন্দ্রে বিশেষ ধরনের স্থাপত্য স্মারক কুঠুরি একটি দুষ্প্রাপ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার। যেখানে গৌতম বুদ্ধ বা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ শিষ্যের দেহ ভষ্ম ও ব্যবহৃত জিনিস রাখা হতো। 

এর উপরের অংশ গোলাকার ও নিচের অংশ চতুষ্কোণ আকৃতি। বাংলাদেশে এ আবিষ্কার প্রথম। স্মারক কুঠুরির গোলাকার অংশ বৌদ্ধ ধর্মের দর্শনের সৃষ্টিতত্ত্ব ‘শুন্যবাদ’ এর প্রতীকী রুপ। এছাড়া স্তূপের অন্তস্থলটি নির্মিত হয়েছিল স্পোকযুক্ত গাড়ির চাকার আদলে। গোল চাকাই শুন্যের প্রতিরুপ এবং চাকা গতির প্রতীক। উলম্ব ইটের বিন্যাসকে চাকার স্পোকের সঙ্গে তুলনা করা হয়। স্পোককে কল্পনা করা হয় সূর্যের রশ্মির সঙ্গে। 

এখানে ইতিপূর্বে ইট দিয়ে নির্মিত সুরক্ষা প্রাচীরের অংশ বিশেষ পাওয়া গেছে। সুরক্ষা প্রাচীরটি যে পুরো স্তূপ কমপ্লেক্স জুড়েই ছিল এবারের আবিষ্কারে তা অনেকটা পরিষ্কার হয়েছে। পুরো বসতি জুড়ে সুরক্ষা প্রাচীরও বাংলাদেশ এই প্রথম। ইতিপূর্বে উৎখননে নকশা আকৃতির ইটের ভাঙা টুকরা পাওয়া গেলেও স্থাপত্যের সঠিক অবস্থানে ইটের নকশা পাওয়া যায়নি। এবার সুরক্ষা প্রাচীরের বাইরের দেয়ালে একটি হলেও ইটের পূর্ণাঙ্গ নকশা সঠিক অবস্থানে আবিষ্কৃত হয়েছে। 

ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খননকালে হতাশার জায়গা ছিল নাটেশ্বরে পোড়ামাটির ফলক না আবিষ্কৃত হওয়া। কিন্তু নকশাকৃত ইটের ব্যবহার বুঝতে পেরে রহস্যটি উন্মোচিত হলো। অতীশের জন্মভূমিতে স্তূপ কমপ্লেক্সের দেয়াল অলংকরণের ক্ষেত্রে পোড়ামাটির ফলকের পরিবর্তে নকশাকৃত ইট ব্যবহৃত হয়েছে। যা গবেষকদের নতুন করে ভাবতে সহায়তা করবে।

এ সময় জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন, বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচির পরিচালক  ড. নূহ-উল-আলম লেনিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

ব.ম শামীম/আরএআর