খুলনায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ১৬৫০টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া ও অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে ১৮ হাজার ৪৮৩ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। আর ১১২টি ঘেরের ৬.১৫ মেট্রিক টন মাছের ক্ষতি হয়েছে। যার মূল্য ধরা হয়েছে ৩০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। 

খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে খুলনায় মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২২৯ মিলিমিটার। এর মধ্যে রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ৬টা পর্যন্ত ১২ মিলিমিটার এবং সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ৬টা পর্যন্ত ২১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

পরিবেশবাদী সংগঠন ছায়া বৃক্ষের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, বৃষ্টির কারণে নগরীর খালিশপুর পদ্মারোডের একটি বাড়ির ২৫-৩০ ফুটের মতো দেওয়াল ধ্বসে পড়েছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে নিরুপণ করা হয়েছে। এতে খুলনায় ১৬৫০টি ঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতির পরিমাণের প্রকৃত তথ্য পেতে আরও তিন দিন লাগবে। 

খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝড়ের কারণে খুলনায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে কিছু ঘর, ফসলি জমি ও ঘেরের ক্ষতি হয়েছে।

পাইকগাছা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. টিপু সুলতান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝড়ের প্রভাবে উপজেলার ১১২টি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব কুমার পাল জানান, খুলনার মধ্যে শুধুমাত্র পাইকগাছা উপজেলায় মৎস্য ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। সেখানকার ৮৩ জন মৎস্যচাষির ১১২টি ঘেরের ৬.১৫ মেট্রিক টন মাছের ক্ষতি হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৩০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝোড়ো হওয়া ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় জেলার ১৮ হাজার ৪৮৩ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৯৪২হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত ও ২৯৩ হেক্টর সবজির ক্ষেত, ৩ হেক্টর সরিষা, ৪ হেক্টর মাসকলাই, ৬ হেক্টর মরিচ, ৯৫ হেক্টর পেঁপে, ১৩৪ হেক্টর কলা, ৫ হেক্টর পান ও এক হেক্টর ধনিয়ার ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পানি সরে গেলে ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান। 

মোহাম্মদ মিলন/আরএআর