চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার পর এবার রংপুরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। এরই মধ্যে সমাবেশে বৃহৎ জনসমাগমের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হয়েছে ৩৬ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট।

মটর মালিক সমিতির ডাকা এ ধর্মঘটের কারণে রংপুরসহ বিভাগের আট জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আগামীকালের গণসমাবেশ সফল করতে নানা উপায়ে রংপুরে আসছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

ধর্মঘটের কারণে ছোট ছোট যানবাহনগুলোর ওপর চাপ বেড়েছে। সঙ্গে ভাড়া বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। তবুও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিএনপির নেতা-কর্মীদের জন্য এখন মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটোরিকশাই অন্যতম ভরসা। ছোট যানবাহনগুলোতে গাদাগাদি, ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাচ্ছে মানুষজন। এতে এক দিকে ভোগান্তি বেড়েছে, দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া ও সময় অপচয়সহ নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন সাধারণ যাত্রীরা।

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রংপুর মহানগরীর মডার্ন মোড়, কেন্দ্রীয় সিটি বাস টার্মিনাল, পার্কের মোড়, মাহিগঞ্জ সাতমাথা বাসস্ট্যান্ড, কলেজ রোড কুড়িগ্রাম বাসস্ট্যান্ডসহ মেডিকেল মোড় এলাকা ঘুরে দেখা যায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এই সড়কগুলোতে অটোরিকশা, সিএনজি ও লেগুনার চাপ বেড়েছে। বাসস্ট্যান্ডসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বেড়েছে মানুষের জটলা।

ছোট যানবাহনের চালকরা বলছেন, শুধু ধর্মঘটের কারণে নয় বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে রংপুরে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। বেশির ভাগ মানুষ বিভিন্ন জেলা শহর থেকে রংপুরে এসেছেন। তারা কেউ মাঠে যাচ্ছেন, কেউবা পরিচিতজনদের এলাকায়। এতে করে শহরের অলিগলি সবখানে একটা বাড়তি চাপ দেখা গেছে। 

নগরীর মডার্ন মোড়ে আসা শ্রমিক শুকুর আলী বলেন, আমি পাবনায় চটের মিলে কাজ করি। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মডার্ন মোড়ে বসে আছি, কোনো গাড়ি নেই। ভীষণ বেকায়দায় পড়েছি। আমাকে একাধিক গাড়ি বদল করে যেতে হবে। আমাদের মতো মানুষের এই কষ্টের দায় কে নেবে, সরকার নাকি বিরোধী দল? এভাবে আমাদেরকে কষ্ট দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ফায়দা নেওয়ার কোনো মানে হয় না।

মডার্ন মোড়ে কথা হয় ব্যবসায়ী রমজান আলীর সঙ্গে। তিনি বগুড়ার মোকামতলা থেকে দুপুরে রংপুরে এসেছেন। বিএনপির সমাবেশে আসা রমজান আলী বলেন, গাইবান্ধা পর্যন্ত আসতে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু রংপুরে আসার পর বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট দেখেছি। আমার কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু কয়েক দফায় লেগুনা বদল করে বেশি ভাড়া দিয়ে রংপুরে আসতে হয়েছে।

অটোচালক আব্দুস সালাম বলেন, সাধারণত অন্য সময় বেশি ভাড়া নেওয়া হয় না। এখন যাত্রীর চাপ বেশি। সবাই গন্তব্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করছে। আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে একটু বেশি ভাড়া নিলেও তা জোর করে নয় বরং চেয়ে নিচ্ছি।

লেগুনা শ্রমিক সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন তেলের দাম বেড়ে গেছে। আজকে যাত্রী বেশি, শহরে ছোট ছোট যানবাহনও বেশি। আমরা সব কিছু হিসেব করেই যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছি। আমরা কাউকে হয়রানি করছি না। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে বসানো চেকপোস্টে স্যারেরা গাড়ি ধরে কাগজপত্র দেখাসহ যাত্রীদের অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করছে। এটার সঙ্গে আমাদের কোনো হাত নেই।  

এদিকে বিএনপির সমাবেশস্থল রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে কথা হয় নীলফামারী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলমের সঙ্গে। তার সঙ্গে কয়েকশ নেতা-কর্মীকে মাঠে দেখা যায়। জহুরুল আলম বলেন, বাস ধর্মঘটের আশঙ্কায় আমাদের অনেকে বুধবার থেকে রংপুরে অবস্থান করছেন। অনেকে আবার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে রংপুরে পৌঁছেছেন। শুক্রবার সকালে নীলফামারী থেকে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, সিএনজিসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহনে করে নিজ উদ্যোগে অনেকে রংপুরে চলে এসেছেন। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখে মনে হচ্ছে নীলফামারী থেকে ১০ হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক গণসমাবেশে যোগ দিতে চলে আসবে। এ সংখ্যা বেশিও হতে পারে।

সমাবেশে যোগ দিতে আসা কুড়িগ্রামের রৌমারী যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ বলেন, সরকার গাড়ি বন্ধ করেছে, পথ বন্ধ করতে পারেনি। ভোরেই পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী হেঁটে রৌমারী থেকে রওনা দিয়েছি। নৌকা, রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে করে কালেক্টরেট মাঠে দুপুরে আসলাম। আজ রাতে মাঠেই অবস্থান করব আমরা।

রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি একেএম মোজাম্মেল হক বলেন, মহাসড়কের নিরাপত্তার জন্য পরিবহন মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার আইন করেছে। কিন্তু রংপুরের মহাসড়কগুলোতে এখনো অবৈধ যান চলাচল অব্যাহত রয়েছে। তাই কয়েকটি সংগঠন মিলে শুক্রবার থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

এদিকে আগামীকাল শনিবার দুপুর ২টায় রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হবে। সমাবেশের এক দিন আগে শেষ মুহূর্তে নগর ও সমাবেশের মাঠজুড়ে চলছে সাজ সাজ রব। সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে অবস্থান করছেন। সমাবেশ যেকোনো মূল্যে সফল করতে সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির নেতা-কর্মীরা।

প্রস্তুতির বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন বাধা, ধর্মঘট উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে দলীয় নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেছেন।

প্রসঙ্গত, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে বিএনপি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে। গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ ও ২২ অক্টোবর খুলনায় সমাবেশ করেছে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ অক্টোবর রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে চতুর্থ গণসমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে।

আরএআর