আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদেরকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগিয়ে এখন টিস্যু পেপারের মতো ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে রংপুর মহানগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড়স্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের গলিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

তিনি আরও বলেন, অতি উৎসাহী পুলিশ ভাইসহ প্রশাসনের লোকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আপনারা যাদের জন্য এতো কিছু করছেন, এখন তারাই আপনাদের অনেক সহকর্মীকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছেন। এসব খবর এখন পত্রিকাতে পাওয়া যাচ্ছে। আপনাদের অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অর্থাৎ যখন সরকারের কাজ শেষ তখন টিস্যু পেপারের মতো আপনাকেও ছুড়ে ফেলে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সারাদেশে পুলিশের মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা, নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মহানগর বিএনপি এই কর্মসূচির আয়োজন করে। বুধবার বেলা ২টার দিকে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সম্মুখ ফটকের সামনের সড়কে অস্থায়ী মঞ্চে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও পুলিশ বাঁধা দেয়। পুলিশি বাধার মুখে সড়কে সমাবেশ করতে না পেরে কার্যালয়ের সরু গলির ভিতরে ট্রাকে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে সমাবেশ সংগঠিত হয়। এ সময় পুলিশি বাধার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।

রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন-নবী ডনের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ও জাহাঙ্গীর আলম।  

সমাবেশে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ যা বলে তার উল্টো করে। তারা বলেছিলেন ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াবেন, কিন্তু এখন চালের কেজি ৭০-৯০ টাকা। বিনা পয়সার সার দেবেন। অথচ এখন ৩০০ টাকার সারের বস্তা ১৪০০ টাকাতেও পাওয়া যায় না। ঘরে ঘরে চাকরি দিতে চেয়েছিলেন তারা। বদলে চাকরি চলে যাচ্ছে। কারণ এই দলের নাম আওয়ামী লীগ, যারা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে না। তারা প্রশাসন, আইন-আদালত আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে থাকায় বিশ্বাসী।  

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দুর্ভিক্ষের আওয়াজ পাওয়া যায়। কারণ তারা ক্ষমতায় থাকলে দুর্ভিক্ষ হয়। এর আগে চুয়াত্তরেও আওয়ামী লীগ জনগণকে দুর্ভিক্ষ উপহার দিয়েছিল। তারা যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দুর্ভিক্ষ আসে। এই দল জনগণের কোনো কল্যাণে কাজে আসেনি। তাদের সময়ে মহাপ্রকল্পের নামে শুধু লুটপাট হয়, পাচার হয়। সত্যিকারের ব্যবসায়ীরা ব্যাংক লোন পায় না। সামান্য ঋণের জন্য কৃষককে কোমরে দঁড়ি বেধে আদালতে নেওয়া হয়। অথচ বড় বড় লুটপাট আর পাচারকারীদের কিছুই হচ্ছে না।

১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে সরকার নতুন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের কোনঠাসা করার পায়তারা করছে দাবি করে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, শর্ত দিয়ে বিএনপির আন্দোলন দমানো যাবে না। নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে সরকার। তবে যত বাধাই আসুক বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে থাকবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।

প্রধান বক্তা আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, সরকার খেলা হবে বলে ভয়ভীতি সৃষ্টির পায়তারা করছে। অথচ আমরা তো ফাইনাল খেলার জন্য প্রস্তুত। বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো ধাপে ধাপে ফাইনালের দিকে যাচ্ছে বিএনপি। এবার রাজপথেই ফয়সালা হবে। আওয়ামী লীগের জবাব জনগণই দেবে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা সারাদিন মিথ্যা কথা বলে, মানুষ বিভ্রান্ত করে। এসব করে আর লাভ হবে না। আমরা যে কারণে আন্দোলন করছি, এখন সেই সুরে আওয়ামী লীগও গান গাইছে। আমরা আন্দোলন করছি ভোট চোর, দুর্নীতিবাজ, লুটপাট, পাচার, গণতন্ত্র হত্যাকারী ও অবৈধ শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে। সারা দেশের মানুষ আমাদের আন্দোলনে সাড়া দিচ্ছে, তারাও এখন বিএনপির সঙ্গে রাজপথের আন্দোলনে রয়েছে।

আওয়ামী লীগও মনে মনে বিএনপির আন্দোলনের সাথে শরীক হতে চায় উল্লেখ করে আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেবও আমাদের দাবির সাথে একমত পোষণ করে। তারাও নাকি ভোট চোরদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্বে আন্দোলন করছে। আমার মনে হয় বিএনপির আন্দোলনের সাথে ওবায়দুল কাদের সাহেবও আছেন। আমরা এই সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করেই ঘরে যাব ইনশাআল্লাহ।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/রংপুর