ফাইল ছবি

টাঙ্গাইলে বিভিন্ন থানায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করছে। গত দুই সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন থানায় পুলিশের দায়েরকৃত ১১টি মামলায় ৩৫০ জন বিএনপি  ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় গ্রেপ্তারের পর রিমান্ড ও কারাগারে পাঠানো হয়েছে প্রায় ৬৩ নেতাকর্মীকে।

বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, মিথ্যা অভিযোগ এনে নেতাকর্মীদের হয়রানি করার জন্য পুলিশ এসব গায়েবি মামলা দায়ের করেছে। মূলত ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ মামলা করা হয়েছে। মামলা দায়ের পর তারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরে থাকতে পারছেন না।

তবে পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, নাশকতা সৃষ্টির প্রস্তুতিসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এসব মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।

জানা যায়, বাসাইলে থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক টিটু চৌধুরী বাদি হয়ে ১৬ জনের নামসহ অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করে ২৪ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় তিনজনকে দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

২১ নভেম্বর টাঙ্গাইল শহরে বিএনপির প্রস্তুতি সভা থেকে ফেরার পথে তিনজন আইনজীবীসহ ১২ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ওই রাতেই বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরদিন আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত একদিন করে ১২ জনকে রিমান্ড মঞ্জুর করে।

একই দিনে নাগরপুর উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের দুজনকে এবং এর আগে ১৭ নভেম্বর কালিহাতী উপজেলার পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও পুলিশ বাদি হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করে। কালিহাতীর মামলায় ২৯ জনের নামসহ ৩০ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাত করে আসামি করা হয়। নাগরপুরের মামলায় ২১ জনের নামসহ ৪০ থেকে ৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।

২২ নভেম্বর ঘাটাইলে পুলিশের উপর ককটেল হামলার অভিযোগে বিএনপির ৩৫ জনের নামসহ ৪০ থেকে ৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া ১০ জন নেতাকর্মী পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

গত ২৩ নভেম্বর মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেন বাদি হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৬ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ৬ নেতার দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

২৯ নভেস্বর দেলদুয়ারে বিএনপির ২০ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। পরে গ্রেপ্তারকৃত দুজনকে এক দিন করে রিমান্ড দেন আদালত। 

৩০ নভেম্বর রাতে সখীপুর উপজেলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ৮৮ বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী। সেদিন রাতেই উপজেলা বিএনপি, কৃষক দল এবং যুবদলের ৪ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

১ ডিসেম্বর গোপালপুরে ২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ৫ জনকে এক দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। একই দিন ভূঞাপুরে ১৬ জনের নামে মামলা দিয়েছে পুলিশ।

এদিকে বিভিন্ন থানায় মামলাগুলো দায়েরের পর এলাকার বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীরা জানান, যাদের নাম মামলায় রয়েছে তারা গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়েছেন। অন্যরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন। প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। যে কাউকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করার সুযোগ রয়েছে।

সখীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সাজু জানান, কোনো ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাই ঘটেনি। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় নেতাকর্মীরা স্থানীয় একটি ক্লাবে বসে টিভিতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখছিলেন।

টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি দুর্জয় হোড় শুভ জানান, ওয়ারেন্ট ছাড়াই ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে আটক করে গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। নেতাদের খুঁজতে রাতে বাসায় বাসায় অভিযান চালাচ্ছে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশ ধারাবাহিকভাবে মিখ্যা গায়েবি মামলা দায়ের করছে। দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের জন্য বাড়িতে হানা দিচ্ছে। ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ কোথাও কোনো ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাই ঘটেনি। কাউকে বাড়ি থেকে, কাউকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা রাস্তা থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। মামলার কোনো সত্যতা নেই। অবিলম্বে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন। শত বাধা সত্ত্বেও জেলা থেকে বিএনপির ২৫ হাজার নেতাকর্মী ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দেবে।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরফুদ্দীন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা নাশকতার উদ্দেশে জমায়েত হয়। ককটেলও উদ্ধার করা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। 

অভিজিৎ ঘোষ/আরকে