বিজয়ের মাসে দেশের মানুষের কাছে অসাম্প্রদায়িকতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে ৩০০ কিলোমিটার হাঁটলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল। গত ১ ডিসেম্বর থেকে টানা ১০ দিন চলে তার এই বিজয় পদযাত্রা। পথে তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও পথশিশুদের শোনান মুক্তিযুদ্ধের গল্প। 

গল্প বলতে বলতে আবার ব্ল্যাকবোর্ডে রেখাচিত্র এঁকে এঁকে গল্পের মতো করে শোনান একেকটি ঘটনা প্রবাহ। এ সময় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে শপথও নেয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ের জয় বাংলা চত্বরে এসে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু।

মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা শুরু করে ফুলবাড়িয়া, ভালুকা, ত্রিশাল হয়ে ময়মনসিংহের ১৩টি উপজেলা এবং নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় হাঁটেন। ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মুক্ত দিবসে তিনি হালুয়াঘাট থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার হেঁটে আসেন। পরে বিকেলে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউসের পাশে বঙ্গবন্ধু চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে পদযাত্রার সমাপ্তি হয়। 

এর আগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার তেলিখালি থেকে ময়মনসিংহ নগরের সার্কিট হাউস মাঠ পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার পথ হেঁটেছিলেন বিমল পাল। 

পদযাত্রা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল বলেন, নতুন প্রজন্মসহ সব বয়সী মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িকতার বার্তা পৌঁছে দিতেই পথ চলেছি। ব্যক্তি বিমল পাল হিসেবে নয়, আমি সব মুক্তিযোদ্ধার পক্ষ হয়ে হেঁটেছি। আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের সময় যে অসাম্প্রদায়িকতার ডাক ছিল, সেটি এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা পায়নি। এ কারণে আমি এই চেতনা ছড়িয়ে দিতে হাঁটতেই থাকব।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পালের এমন উদ্যোগকে আমি দৃষ্টান্ত হিসেবে মনে করি। জাতির পিতার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তিনি যে ত্যাগী মনোভাব দেখিয়ে যাচ্ছেন, সকলে যেন এটি অনুসরণ করে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সামাজিক কর্মকাণ্ডগুলো যেন পরিচালনা করে সেই আহ্বান জানাই।

সমাজকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধার বিজয় পদযাত্রা সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক শংকর সাহা বলেন, একজন যোদ্ধার কোনো অবসর নেই। কোনো অজুহাত থাকতে নেই। তাই বয়সের বাধা, পথের প্রতিকূলতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল ১০ দিন হেঁটেছেন পথে-প্রান্তরে। নতুন প্রজন্মসহ সবার কাছেই পৌঁছে দিয়েছেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের আহ্বান। দেশকে সব দিক থেকে পরিপূর্ণভাবে গড়ে তুলতে আমাদের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিমল পালের মতোই সচেষ্ট হতে হবে। 

উবায়দুল হক/আরএআর