চার বছর বয়সী আখলিমা। অন্য শিশুরা যখন খেলাধুলায় মত্ত ঠিক তখনই শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথাসহ নানা উপসর্গ নিয়ে আখলিমা থাকে তার মায়ের কোলে। সন্তানের এমন অসুস্থার কারণে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকেন আখলিমার বাবা-মা।

গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার মাঝিগাতি ইউনিয়নের ডালনিয়া গ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বল শেখ ও শাহানাজ বেগম দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় আখলিমা। জন্মগতভাবেই আখলিমার হার্টে ছিদ্র। বাবা-মা জানতে পারে তিন মাস বয়সে। তখন থেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা করাচ্ছেন তারা। টাকার অভাবে করাতে পারেননি অপারেশন। এরই মধ্যে বিক্রি করেছেন নিজেদের মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকুও। এখন থাকেন অন্যের জমিতে।

আখলিমার মা শাহানাজ বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মেয়ের জন্মগতভাবেই হার্টে ছিদ্র। তিন মাস বয়সে আমরা তা জানতে পারি। দিন দিন হার্টের ছিদ্রটা আরও বড় হচ্ছে। ডাক্তার বলেছেন এই মাসের মধ্যে অপারেশন না করাতে পারলে তাকে হয়তো আর বাঁচানো সম্ভব হবে না। অপারেশন করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। যেখানে ঠিকমতো খেতে পারি না সেখানে অপারেশন করাবো কি দিয়ে? কেউ যদি সাহায্য করতো তাহলে হয়তো আমার মেয়েটা বেঁচে যেত।

তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী একজন দিনমজুর। যে টাকা আয় করে তা দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। ভিটাবাড়ি বিক্রি করে চারটি বছর ধরে মেয়েটির চিকিৎসা করে আসছি। এখন পরের জমিতে থাকি।

হালিমা নামের এক প্রতিবেশী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জন্মের পর থেকেই মেয়েটার এই অবস্থা। মেয়েটিকে নিয়ে ওর বাবা-মা অনেক কষ্ট করছেন। ভিটাটুকু বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু ওর চিকিৎসার জন্য প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাগবে। এত টাকা তো ওর বাবার নেই।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মুন্নু মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওদের জন্য খুবই মায়া হয়। মেয়েটার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমরা গ্রামবাসী কিছু টাকা তুলে দেওয়ার চিন্তা করছি।

মাঝিগাতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুকুল খান বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। আমরা এখন আমাদের পক্ষ থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে সাহায্য করবো।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক হারুন অর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেয়েটির পরিবার যদি আমাদের কাছে আবেদন করে তাহলে আমাদের পঞ্চাশ হাজার টাকার একটি অনুদান প্যাকেজ আছে, সেটি আমাদের পক্ষ থেকে দিতে পারবো।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ধরনের রোগীদের বেশি দেরি করা ঠিক না। ওর রিপোর্ট দেখে যা মনে হলো হার্টের কন্ডিশন খুবই খারাপ। দ্রুতই অপারেশন করাতে হবে।

আশিক জামান/এমজেইউ