আর্থিক ঝুঁকির মুখে রংপুরের বেসরকারি স্বাস্থ্যখাত
রংপুরে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে অসাধু সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে সিভিল সার্জন ডা. শামীম আহমেদ বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে আর্থিক ঝুঁকির মুখে পড়ার সঙ্গে পুঁজি হারাতে বসেছেন বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগকারী ও নতুন উদ্যোক্তারা।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর নগরীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করে বাংলাদেশ বেসরকারি হসপিটাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন।
রংপুরে চিকিৎসা খাতে ৬৭ শতাংশ সেবা প্রদান করা বেসরকারি হসপিটাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়ন ও প্রদান কার্যক্রমে সিভিল সার্জনের শৈথিল্য, টালবাহানা ও বিভিন্নভাবে হয়রানি করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে সংগঠনটির রংপুর জেলার সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মামুনুর রহমান বলেন, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো বেসরকারি খাতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা এক নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে হঠাৎ মানহীন গজিয়ে ওঠা চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর দৌরাত্ম্য, প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি হসপিটাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো দীর্ঘদিন লাইসেন্স নবায়ন না করাসহ জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে দুর্নীতিবাজ চক্রের কার্যক্রম স্বাস্থ্যসেবা খাতে সাধারণ উদ্যোক্তাদের মাঝে সীমাহীন অস্থিরতা ও হতাশা সৃষ্টি করেছে। একটি অসাধু সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে সিভিল সার্জন এসব করছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২৫ মে সারাদেশে লাইসেন্স নবায়ন, সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মানোন্নয়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করাসহ অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের জন্য অভিযান পরিচালনার সুস্পষ্ট ও কঠোর নির্দেশ দেন। সারাদেশে সিভিল সার্জনদের ৩০ জুনের মধ্যে লাইসেন্স নবায়নের জন্য পরিদর্শন কার্যক্রম শেষ করে প্রতিবেদন প্রদানের তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু গত ছয় মাসে রংপুরের সিভিল সার্জন বিগত বছরগুলোতে নিবন্ধিত ৫১ ক্লিনিক এবং ৬৪ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে গুটি কয়েক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নবায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সুপারিশ পাঠিয়েছেন। এতে রংপুরের বেসরকারি হসপিটাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতাসহ অস্তিত্ব রক্ষার হুমকি সৃষ্টি হয়েছে।
ডা. মামুনুর রহমান বলেন, আবেদন থাকা সত্ত্বেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পর অনেক হসপিটাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিভিল সার্জন কখনো পরিদর্শন করেননি। এ অবস্থায় এই খাতে বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা প্রচণ্ড আর্থিক ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছেন। একই সঙ্গে অনেকেই বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাতেও বসেছেন। উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পারছি না। এ ধরনের অনাকাঙিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে আমরা অতীতে অনেকবার সিভিল সার্জনের সঙ্গে সাক্ষাত করে প্রাতিষ্ঠানিক অনিশ্চয়তা ও দূর্বিষহ পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিগত নির্দেশগুলো বাস্তবায়নের অনুরোধ করেছি। শুধু তাই নয়, আমরা চলমান সমস্যা সমাধানে সিভিল সার্জনকে স্মারকলিপিও দিয়েছি। কিন্তু দীর্ঘ ছয় মাসে এই অনিশ্চিত ও অনাকাঙিক্ষত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সিভিল সার্জন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি অভিযোগ করেন, সিভিল সার্জন অনৈতিক প্রস্তাবের মাধ্যমে কমিশন বাণিজ্য করার পাঁয়তারা করছেন। তিনি আমাদের কাছে কৌশলে উৎকোচ দাবি করছেন। আমাদের পিটকে দেয়ালে ঠেকে দিয়ে তিনি রংপুরের বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছেন। আমরা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থ ও ন্যায্য অধিকার আদায়ে আগামী সপ্তাহ থেকে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করব। এতেও যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে আমরা বাধ্য হবো।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক সামসুর রহমান কোয়েল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামান রনি, খন্দকার মাহমুদ এলাহী বিপ্লব, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এসব অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে সিভিল সার্জন ডা. শামীম আহমেদ বলেন, আমরা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। এটি চলমান কার্যক্রম। কিন্তু বেশ কিছু হসপিটাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মানছে না। তারপরও আমরা তাদেরকে লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দিতেই প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছি। তাদের অনেকেই কমিশন বাণিজ্য করে, সেটা বন্ধে আমরা তাদেরকে সতর্ক করেছি। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যখাতে সেবার মানোন্নয়ন এবং দালাল ও কমিশন বাণিজ্যমুক্ত সেবা প্রদানের ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বলা হচ্ছে, কিন্তু অনেকেই সেটা মানছেন না।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর