রাজৈর ইউনিয়নের একটি বিদ্যালয়

এক দশকেও মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার রাজৈর ইউনিয়নের প্রায় চার হাজার মানুষের ভাগ্য বদল হয়নি। ২০১২ সালে রাজৈর ইউনিয়ন পরিষদের একটি সম্পূর্ণ ওয়ার্ড ও কয়েকটি ওয়ার্ডের অংশ বাকি রেখে ইউনিয়নের বেশির ভাগ অংশ নিয়ে গঠন করা হয়েছে রাজৈর পৌরসভা।

যার ফলে রাজৈর ইউনিয়নে ১০ বছর ধরে নেই কোনো নির্বাচন। নেই কোনো চেয়ারম্যান বা ইউপি সদস্য। পুরোনো সেই ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য কোনোভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সমাজে কোনো অন্যায়-অবিচার হলে বিচার দেওয়ার মতো কোনো অভিভাবক নেই বলেও জানান স্থানীয়রা। 
 
স্থানীয়দের দাবি- আশপাশের অন্য ইউনিয়ন থেকে কিছু অংশ নিয়ে তাদের একটি ইউনিয়ন গঠন করে দিলে তারা নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। অন্য ইউনিয়নের সচিব অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন এই ইউনিয়নে। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার রাজৈর ইউনিয়নটি ছিল উপজেলার প্রাণকেন্দ্র। ২০১১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের এক বছর পর ২০১২ সালে রাজৈর ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড ও কয়েকটি ওয়ার্ডের সামান্য অংশ বাদে ইউনিয়নের বেশিরভাগ অংশ নিয়ে গঠন করা হয় রাজৈর পৌরসভা । দুই বছর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনা করার পর ২০১৪ সালে প্রথম পৌরসভা নির্বাচন হয়। 

প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন শামীম নেওয়াজ মুন্সি। রাজৈর ইউনিয়নের চৌয়ারী বাড়ি ও ভেন্নাবাড়ী গ্রাম দুটি ইউনিয়নেই থেকে যায়। যা রাজৈর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত ছিল । এছাড়াও ৮ নং ওয়ার্ডর মজুমদার কান্দির কিছু অংশ ও ২নং ওয়ার্ডের দোদ্বারা গ্রামের কিছু অংশ পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ২০১১ সালে নির্বাচনের সময় সেখানে ভোটার ছিল ২৫৭৭ জন। বর্তমানে ইউনিয়নের খণ্ডিত অংশে চৌয়ারী বাড়ি, ভেন্নাবাড়ী ও মজুমদার কান্দির খণ্ডিত অংশের  জনসংখ্যা প্রায় চার হাজার। বর্তমানে তাদের নেই কোনো চেয়ারম্যান। নেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, যেখানে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন। 

১০ বছর কেটে গেলেও তাদের নিয়ে যেন কারও কোনো ভাবনাই নেই। এ অঞ্চলের মানুষ নিম্নবিত্ত হওয়ায় তাদের নিয়ে কেউ ভাবছে না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। জনপ্রতিনিধি না থাকায় তারা প্রায় সব ধরনের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বলেও জানান তারা। এছাড়া এলাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে বিচার দেওয়ার মত কোনো অভিভাবক নেই তাদের। যার ফলে সামাজিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মোকাবিলা করতে হয় ব্যক্তিগতভাবেই। 

এলাকায় মাদক, জুয়া ও ইভটিজিংয়ের মতো ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ নিম্নবিত্ত হওয়ায় তারা পৌরসভার ভোটার হতে আগ্রহী নয়। পৌরসভার নাগরিক হলে তাদের পৌরকরসহ বিভিন্ন ধরনের খরচ বাড়বে বলে মনে করেন তারা। তাই তারা পৌরসভার অধীনে যেতে চান না। আশপাশের ইউনিয়নগুলো থেকে কিছু অংশ নিয়ে তাদের একটি ইউনিয়ন উপহার দেবে স্থানীয় প্রশাসন এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

স্থানীয় তুষার বর নামে এক দোকানদার বলেন, তারা রাজৈর ইউনিয়নে ভালোই ছিলেন। পৌরসভা করার সময় তাদের ইউনিয়নের ৭টি ওয়ার্ড সম্পূর্ণ নিয়ে গেছে। তাদের ৯ নং ওয়ার্ডটি সম্পূর্ণই ইউনিয়নেই রয়ে গেছে। এছাড়া ৭নং ওয়ার্ডের কিছু অংশ রয়ে গেছে ইউনিয়নে। এখন কোনো অভিভাবক নেই তাদের। অন্যায় অবিচার হলে বিচার দেওয়ার মতো নেই কেউ। তারা গরিব অঞ্চলের লোক বলে তাদের নিয়ে কেউ কিছু ভাবছে না বলেও অভিযোগ তার।

স্থানীয় সুনীল কুমার ও রবিন হালদার বলেন, দুই ওয়ার্ডের হাজার হাজার নাগরিকের সমস্যা নিয়ে কথা বলার বা সমস্যা সমাধান করার জন্য কেউ আসে না। সবাই বলে আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করে দিব। কিন্তু কেউ সমাধান করে দেয় না। আমাদের জন্য একটি ছোট ইউনিয়ন করে দিলে বেশি ভালো হতো। 

রাজৈর ইউনিয়নের সর্বশেষ চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বক্কার বলেন, রাজৈর পৌরসভা ঘোষণা হওয়ার পর ইউনিয়নের দুটি ওয়ার্ড বাদে বাকিগুলো পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই দুই ওয়ার্ডের নাগরিকরা এখন ভোট দিতে পারছে না, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই। তাই প্রশাসনের কাছে বিষয়টি দেখার দাবি জানাই। ওই দুটি ওয়ার্ডের আশপাশের ইউনিয়ন থেকে কিছু ওয়ার্ড সংযুক্ত করলে ছোট একটি ইউনিয়ন হতে পারে। 

রাজৈর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্বে) বিদ্যুৎ হালদার জানান, তিনি মূলত বদরপাশা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে রাজৈর ইউনিয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে। ইউনিয়নের দুটি ওয়ার্ড বাদে সব পৌরসভায় নিয়ে গেছে। ওই দুই ওয়ার্ডের কোনো নাগরিকের কোনো প্রয়োজন হলে সুযোগ মতো কাজ করে দেন তিনি।  

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই দুই ওয়ার্ডের জনগণের জন্য খুব তাড়াতাড়ি একটি ব্যবস্থা করা হবে। যাতে তারা ভোটাধিকারসহ সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে।

রাকিব হাসান/আরএআর