লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ২০ দিন ধরে বাড়ির রাস্তায় বালু স্তূপ করায় একটি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি হামলা চালিয়ে বাড়ির নিরাপত্তা দেয়াল ও বাসায় ঢুকে ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নুর আহম্মেদসহ তার পরিবার এ অভিযোগ করেন। এর আগে শনিবার উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরজাঙালিয়া গ্রামের মকবুল হাজীর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।  

থানায় লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভুক্তভোগী নূর আহম্মেদ ও তার ভাই নুর মোহাম্মদ চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। দুই ভাই একই বাড়িতে আলাদা ঘরে বসবাস করে আসছিলেন। পরে দুই বছর আগে বিরোধের কারণে বাড়ির মাঝখান দিয়ে নিরাপত্তা দেয়াল নির্মাণ করা হয়। গত ২৯ নভেম্বর রাতে নুর মোহাম্মদ ও তার পুত্রবধূ সাবেক ইউপি সদস্য নাছিমা আক্তার নয়ন বালু এনে নুর আহম্মেদের রাস্তার মুখে স্তূপ করে রাখেন। পরের রদিন সকালে স্তূপ করা বালুর কারণে নুর আহম্মেদরা বাড়ি থেকে বের হতে পারছিলেন না। এতে তারা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। 

এদিকে ঘটনার ২০ দিন পার হলেও বালুগুলো সরানো হয়নি। কমলনগর থানা পুলিশ ও হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন একাধিকবার ওই বাড়িতে গেলেও বালুগুলো সরানোর জন্য কোনো উদ্যোগ নেননি। এতে নুর মোহাম্মদসহ তার পরিবারের লোকজন পাশের ক্ষেতের ওপর দিয়ে চলাচল করছেন। সেখানেও প্রতিপক্ষের লোকজন বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। 

শনিবার সন্ধ্যায় নুর মোহাম্মদের পুত্রবধূ নয়নসহ কয়েকজন বাড়ির নিরাপত্তা দেয়ালের একাংশ ভেঙে ফেলে। পরে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে লোকজন এনে বাকি অংশটুকু ভেঙে ফেলা হয়। শব্দ শুনে নুর আহম্মেদ, তার স্ত্রী ও ছোট ছেলে বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের ছুরি ঠেকিয়ে বাসায় ঢুকে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে চাইলে অভিযোগ নেওয়া হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

নুর আহম্মেদ ও তার ছেলে ফজলে এলাহি নাঈম জানায়, তাদের রাস্তায় বালু ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় একাধিকবার থানায় ও ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এরপরও পুলিশ প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন আবার তাদের বাড়ির নিরাপত্তা দেয়াল ভেঙে বাসায় হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ তাদের অভিযোগ নেয়নি। এ ঘটনায় তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।

অভিযুক্ত নুর মোহাম্মদ বলেন, আমার জমিতেই বালু রেখেছি। আমি কেন বালু সরাব? প্রথমে নিরাপত্তা দেয়াল ভাঙার সময় আমি বাজারে ছিলাম। শুনে বাড়িতে এসে সবাইকে সচেতন করেছি। পরে রাতে এমনিতেই নিরাপত্তা দেয়ালের বাকি অংশ ভেঙে পড়ে। নুর আহম্মেদের বাসায় হামলা করার অভিযোগটি মিথ্যা। 

কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, ঘটনাস্থল পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, শনিবার রাতে ঘটনার পর বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। কমলনগর থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এসপি