পাবনার সুজানগরে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা সার ও বীজ হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিরুদ্ধে। নিজেদের ও আত্মীয়-স্বজনদের নাম ব্যবহার করে এসব সার-বীজ আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার ১০ ইউনিয়নের কৃষকদের পেঁয়াজ, গম, ধান, ভুট্টা, সরিষা, মুগ ও খেসারির উন্নতমানের বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে বলে নির্ধারণ করা হয়। পেঁয়াজের বীজের জন্য আড়াই শতাধিক কৃষকের তালিকা করা হয়। তবে তালিকায় অধিকাংশই চেয়ারম্যান ও তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং মেম্বারদের নাম ও মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। দুই-একজন কৃষকের নাম থাকলেও তারা বীজ ও সার বিতরণের খবর জানেন না।

কৃষি অফিসের দেওয়া পেঁয়াজ বীজের জন্য বরাদ্দ করা তালিকায় দেখা গেছে, উপজেলার হাটখালি ইউনিয়নের  চেয়ারম্যানের দুটি নম্বর, তার দুই ভাইসহ ৫-৭ জন আত্মীয় ও ইউপি সদস্যদের নাম ও নম্বর তালিকায় রয়েছে। ভায়না ইউনিয়নের তালিকায় সবাই ইউপি সদস্য। মানিকহাট ইউনিয়নের ২৫টি প্রণোদনার মধ্যে ৪টি চেয়ারম্যান, ১টি ইউপি সচিব ও বাকিগুলো সদস্যরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। এভাবে উপজেলার সব ইউনিয়নের প্রণোদনা ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে। দুই-একজন কৃষকের নাম থাকলেও তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এসব বীজের পরিমাণ ১ কেজি থেকে শুরু করে ২০ কেজি পর্যন্ত আর সার দেওয়া হয়েছে ২০-৩০ কেজি পর্যন্ত। এসব বীজ ও সারের মধ্যে পেঁয়াজে ৮ লাখ, গমে ১৭ লাখ টাকা, সরিষা ১১ লাখ টাকাসহ প্রায় অর্ধকোটি টাকার প্রণোদনা রয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটির মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই কমিটির সভাপতি, উপজেলা কৃষি অফিসার সদস্য সচিব এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এই কমিটির উপদেষ্টা। তালিকা প্রণয়ন করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার নেতৃত্বাধীন কমিটি। কিন্তু কিভাবে তালিকাভুক্ত হয়েও এভাবে হরিলুট করা হলো সে বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা।

হাটখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ খান বলেন, ‘তালিকা আমরাই করেছি। সে হয়তো বীজ তুলে নিয়ে এসে আরেকজনকে দিয়েছেন। কিন্তু কোনো অনিয়ম করা হয়নি। তাড়াহুড়ো করে তালিকাটা করে দেওয়া হয়। এজন্য যাচাই-বাছাই করা হয় না। এখানে আমার নম্বরটা কীভাবে গেল জানি না। আর আমার ভাইয়েরা যদি কৃষক হোন তাহলে তো দোষের কিছু না। তারা কৃষক হিসেবে পেয়েছে।’

এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চেয়ারম্যান দাবি করেন, ‘ইউপি সদস্যসহ অনেকের থেকে প্রভাবিত হয়ে তারা এইভাবে তালিকা করেছে। এসব প্রণোদনা উপজেলা পরিষদ থেকে দেওয়া হয়, সেখান থেকেও একাধিকজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য করা হয় এবং প্রণোদনা দেওয়ার সময় সেখান থেকেই রেখে দেওয়া হয়।’

সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাফিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রথমে ইউনিয়ন থেকে তালিকাটা তৈরি করা হয়। এরপর উপজেলা কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদনের পর সার ও বীজ বিতরণ করা হয়। অনিয়মের অভিযোগ এখনো আমরা পাইনি। যদি কোনো অভিযোগ আসে বা আপনাদের (সাংবাদিক) কাছ থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করে দেখব। এটা প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

তদন্ত করে দেখার কথা বলেন সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যদি সুনির্দিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ করে থাকে অথবা তথ্য দিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

রাকিব হাসনাত/এসপি