রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন
কথার মোড়কে ‘কৌশলী আক্রমণে’ মোস্তফা-ডালিয়া
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই প্রার্থীদের বাকযুদ্ধে ছড়াচ্ছে উত্তাপ। প্রতিদিনই ভোটারদের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির কথা শোনানোর সঙ্গে চলছে প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি ‘কথার মোড়কে কৌশলী আক্রমণ’। ভোটযুদ্ধে প্রচারণার মাঠে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার নিত্যনতুন কথা এখন ভোটারদের আলোচনায়। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছেন।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে প্রচারণার দ্বাদশ দিনে রংপুর মহানগরীর রেলস্টেশন বাজার, ঘোড়াপীর মাজার, বাবুপাড়া, রেলক্রসিং মোড় ও তাজহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেছেন জাপার মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। অপরদিকে মহানগরীর কাচারি বাজার, মেডিকেল কলেজ, টাউন হল মাঠ, হাজিরহাট, নজিরেরহাট, নয়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন নৌকার প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া।
বিজ্ঞাপন
গণসংযোগকালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, লাঙ্গলের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা দেখে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ঈর্শান্বিত। তাই পাগলের প্রলাপ বকছেন। সিটির বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোর দিকে তাকান, মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখুন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরবিচ্ছিন্নভাবে উন্নয়ন করা হয়েছে। মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, কবরস্থান ও শ্মশানের উন্নয়ন হয়েছে। বর্ধিত এলাকায় সড়ক বাতি পৌঁছে গেছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ ও ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এখন নগরবাসী নিজ ওয়ার্ড থেকেই জন্ম ও মৃত্যুসনদ গ্রহণ করতে পারছেন।
তিনি আরও বলেন, এখন রংপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের থেকে অনেক বেশি উন্নত। মূল শহরের কোথাও ভাঙাচোরা সড়ক নেই। করোনা মহামারির মধ্যেও আমি উন্নয়নমূলক কাজগুলো বন্ধ রাখতে দিইনি। এখন সুফল পাচ্ছে নগরবাসী। আমার অসম্পন্ন কাজগুলো সম্পন্ন হলে আগামী দিনে রংপুর একটা দর্শনীয় শহরে পরিণত হবে।
বিজ্ঞাপন
সদ্য সাবেক এই মেয়র বলেন, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। নগরবাসী আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছিল আমি তা যথাযথভাবে পালন করতে চেষ্টা করেছি। যারা কুৎসা রটাচ্ছেন, তাদের অস্তিত্ব কোথায় আছে? আগামী ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটিতে আবারো লাঙ্গল প্রতীকের ভোট বিপ্লব ঘটবে। ভোটারদের উচ্ছ্বাস এমনটাই বলছে। এমনকি একতরফা ভোটও হতে পারে। কারণ বিগত ৫ বছরের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ণ করেই নগরবাসী আবারো আমাকেই নির্বাচিত করবেন। আশা করছি শতকরা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট আমার পক্ষে থাকবে।
অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নগরবাসীর কাছে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, উন্নয়ন সম্ভাবনাময় রংপুর সিটিতে দীর্ঘদিন ধরে সরকার দলীয় কোনো প্রার্থী না থাকায় পরিকল্পিত কোনো উন্নয়ন হয়নি। তাই রংপুরবাসী উন্নয়নের স্বার্থে এবার নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন।
তিনি আরও বলেন, নৌকা প্রতীক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আমি নৌকার প্রার্থী। জনগণের কাছে গিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নকে স্মরণ করে দিচ্ছি। আমি এমপি থাকাকালীন সীমিত বরাদ্দ দিয়ে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি, পুলিশ লাইনস, টাউন হল বধ্যভূমি নির্মাণের ব্যবস্থা করেছি। নির্বাচনে জনগণের হাতে ভোট। তাই শতকরা কতভাগ ভোট আমি পাব তা বলতে পারছি না। আমি বলছি নৌকা প্রতীকে ভোট দিলে জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে।
এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও আলোচনায় রয়েছেন লাঙ্গল ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। তবে বর্তমানে ভোটযুদ্ধের প্রচার-প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে জাতীয় পার্টির মোস্তফা। সরকারদলীয় প্রার্থী হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে ডালিয়াও মাঠে তার সরব উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। সঙ্গে রংপুরে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন তুলে ধরে নৌকায় ভোট চাইছেন। নৌকা-লাঙ্গলের প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ মানুষের ভোটের পরিসংখ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জমান পিয়াল এবং আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলনও রয়েছেন আলোচনায়।
এবার নির্বাচনে মেয়র পদে রাজনৈতিক দলের সাতজন ও স্বতন্ত্র হিসেবে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া (নৌকা), জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা (লাঙ্গল), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান (মশাল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল (হাতপাখা), খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু (দেয়াল ঘড়ি), জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন (গোলাপ ফুল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান (ডাব), স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি (হরিণ) এবং লতিফুর রহমান মিলন (হাতি)।
প্রসঙ্গত, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই সিটিতে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে দুই লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন পুরুষ এবং দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন নারী ভোটার ২২৯টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এবার মেয়র পদে ৯ জনসহ সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৮ এবং ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৮৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এমজেইউ