পঞ্চগড়ে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় নিহত বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ আরেফিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রোববার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় বোদা উপজেলার ময়দানদীঘির হরিপুর জোত-দেবীকান্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে রশিদ আরেফিনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

রশিদ আরেফিনের জানাজায় দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র ও বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, পঞ্চগড় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ, পঞ্চগড় পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম, বোদা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান সুজাসহ জেলার পাঁচ উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। 

আরেফিনের মৃত্যুতে তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্ত্রী, সন্তান ও বৃদ্ধা মা কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন। সকালে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদসহ জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা আরেফিনের বাড়িতে যান। আরেফিনের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করেন। নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে আরেফিনের স্ত্রী চামেলী বেগম স্বামী হত্যার বিচার দাবি করেন।

বিএনপি নেতা রশিদ আরেফিনের মৃত্যু নিয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, এখন বিএনপির কেউ মারা গেলে পুলিশ বলছে হৃদরোগে মারা গেছেন। এটা এখন তাদের মুখস্থ বুলি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামীকাল ২৬ ডিসেম্বর সারা দেশে গণকর্মসূচি দেবে বিএনপি। ২৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় নেতারা আরেফিনের বাড়িতে স্বজনদের সমবেদনা জানাতে আসবেন। এ হত্যার জবাব আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে দেব।

তবে এর আগে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, রশিদ আরেফিন নামে যিনি মারা গেছেন, তিনি এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাছাড়া তার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়েছিল। তিনি পুলিশের গুলিতে নয়, হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। কেননা তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

এদিকে গণমিছিলের নামে সরকারি কাজে বাধা, বলপ্রয়োগ, ককটেল বিস্ফোরণ, সড়ক অবরোধ ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগে পঞ্চগড় সদর থানায় দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পঞ্চগড় সদর উপজেলার একজন, তেঁতুলিয়ার দুইজন, বোদা উপজেলার দুইজন, দেবীগঞ্জের একজন ও আটোয়ারীর দুইজন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তেঁতুলিয়ার দুইজন জামায়াতের সঙ্গে জড়িত ও বাকিরা বিএনপির নেতাকর্মী বলে পুলিশ জানায়।

উল্লেখ্য, শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বেগম খালেদা জিয়াসহ গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণমিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে পঞ্চগড় জেলা বিএনপি। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের দিকে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় পুলিশ কয়েকজন সদস্য ও বিএনপির প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।

এসকে দোয়েল/এমজেইউ