বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা রেনু বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় দায়সারা তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগ করেছেন মৃতের স্বজনরা। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবের মিলায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিযোগ করেন।

মারা যাওয়া রেনু বেগমের ছেলে আরাফাত চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, শেবাচিম হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসকের অবহেলায় মা রেনু বেগমের মৃত্যু হওয়ার ঘটনায় সুষ্ঠ বিচার চেয়ে ৩০ নভেম্বর শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক বরাবরে লিখিত আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

১৯ ডিসেম্বর তদন্ত কমিটি আমাকে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে বলেন। বাবা অসুস্থ থাকায় সেদিন আমি উপস্থিত থাকতে পারবো না বলে দেই। তবে ২১ ডিসেম্বর উপস্থিত থাকার কথা বলি। এদিন বেলা বারোটায় হাসপাতালে গিয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. অসীম কুমার বিশ্বাসের মুঠোফোনে কল দিয়ে তদন্ত বোর্ডের সন্মুখে যেতে চাইলে তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদন পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। পরদিন ২২ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদনের ফটোকপি পেতে পরিচালক বরাবর আবেদন করলে ২৬ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদনটি হাতে পাই।

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখতে পাই আমাকে অনুপস্থিত দেখিয়ে অভিযুক্ত সহকারী রেজিস্টার ডা. মো. মুশফিকুজ্জামানের বক্তব্য একতরফাভাবে লেখা হয়েছে এবং ডা. মো. মুশফিকুজ্জামানের চিকিৎসা সঠিক ছিল বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এই প্রতিবেদনটি প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ আমার মা রেনু বেগম হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

২১ আগস্ট সকালে কার্ডিওলজি (সি.সি.ইউ) বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম.এ সালাউদ্দিন পরিদর্শনে মাকে দেখে জানান, আরও ২-৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর অবস্থা বুঝে সবকিছু বলা যাবে। কিন্তু ওই দিনই মা রেনু বেগমকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয় কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী রেজিস্টার ডা. মো. মুশফিকুজ্জামান। তখন আমি কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপকের কথা ডা. মো. মুসফিকুজ্জামানকে বললে তিনি তর্কে জড়ান।

আরাফাত চৌধুরী বলেন, মায়ের সুচিকিৎসা পাওয়ার জন্য বাবা ডাক্তারের কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চান। ওই বছরের ১৭ নভেম্বর মা আবার অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে ওই হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করি। কিন্তু ১৯ নভেম্বর ডা. মুশফিকুজ্জামান মাকে দেখতে পেয়ে ছাড়পত্র দিয়ে দেন। ২৩ নভেম্বর আবারও মা অসুস্থ হলে একই বিভাগে ভর্তি করা হয়। ২৭ নভেম্বর পুনরায় ভর্তি করা হলে রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে ইর্ন্টান চিকিৎসকরা পরীক্ষা দেন।

পরের দিন ডা. মুশফিকুজ্জামান ছাড়পত্র দেওয়ার পাশাপাশি মাকে ঢাকা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে রেফার্ড করেন। ঢাকার নেওয়ার পথে মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে উপায়ন্তর না দেখে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরের দিন সেখান থেকে শেবাচিম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করা হলে মাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মা মারা যায়।

তিনি বলেন, রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় সি.সি.ইউতে মারা গেলেও তদন্ত প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি মা রেনু বেগমের অসুস্থ থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র তার পরিবারের সদস্যদের কাছে রয়েছে। সেই কাগজপত্র বা মৃত্যুর পরিবারের কারও বক্তব্য না শুনে তদন্ত কমিটি কোনো নোটিশ না দিয়ে শুধু মুঠোফোনে আমাকে কল করে জানিয়ে ডা. মো. মুশফিকুজ্জামানের পক্ষে একতরফা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মতামত না নিয়ে ডা. মো. মুশফিকুজ্জামানকে নির্দোষ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ডা. মো. মুশফিকুজ্জামানের অবহেলা ও খামখেয়ালিপনার কারণে আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। আমি সুবিচার পেতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি। সংবাদ সম্মেলনে আরাফাত চৌধুরী ছাড়াও তার বাবা উপস্থিত ছিলেন।

তবে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছেন তাতে চিকিৎসার অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া অভিযোগকারীদের আসতে বললেও তারা আসেনি। তদন্তে কোনো পক্ষপাত গ্রহণের বিষয় স্পষ্ট হয়নি।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস