তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৭৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এবার নতুন ভোটার বাড়ার সঙ্গে কেন্দ্র সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি ভোটগ্রহণের পরিসংখ্যা।  

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ভোটগ্রহণ শেষে রাত সোয়া ১২টার দিকে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন।

এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। এর মধ্যে একজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারও রয়েছেন। গত ২০১৭ সালের নির্বাচনে ভোটার ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪। সেবার ১৯৩ কেন্দ্রের মধ্যে একটিতে ইভিএম ছাড়া বাকি সবগুলোতে ব্যালেটে ভোট হয়েছিল। এবার ২২৯টি কেন্দ্রের সবগুলোই প্রথমবারের ইভিএমে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা।

ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, লাঙ্গল প্রতীকে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট।

তৃতীয় অবস্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট। ভোট ব্যবধানে চতুর্থ অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট।

অর্থাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর নৌকার চেয়ে মোস্তফাজিার রহমান মোস্তফা ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৯ ভোট বেশি পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

এছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী আবু রায়হান ডাব প্রতীকে ১০ হাজার ৫৪৯ ভোট, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন গোলাপ ফুল প্রতীকে ৫ হাজার ৮০৯, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান মশাল প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ১৫৬ ভোট। খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু দেওয়াল ঘড়ি প্রতীকে ২ হাজার ৮৬৪ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি হরিণ প্রতীকে ২ হাজার ৬৭৯ ভোট পেয়েছেন।

এই নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি সরকারদলীয় প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার চেয়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৯ ভোট বেশি পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট

মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা দুই লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৬ এবং বাতিল ভোট ১ হাজার ৩৬টি। মোট ভোট পড়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৯৭২টি, যা মোট ভোটের ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৮ জুন ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠনের পর ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট এবং বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট।

২০১২ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন তিন লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৯ হাজার ১২৮ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭৮ হাজার ৬১৪ জন।

দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এক লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু পেয়েছিলেন ৬২ হাজার ৪০০ ভোট এবং বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট। ওই বছর ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ ও নারী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে