বিদ্যালয় ভবনে তিন শতাধিক মৌচাক, আতংকে শিক্ষার্থীরা
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের চৌদ্দঘড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের কার্নিশ, জানালার সানসেট, বারান্দার বাড়তি অংশসহ ভবনের চারপাশের গাছের ডালে ডালে ঝুলছে অসংখ্য মৌমাছির চাক।
বিদ্যালয়টির দ্বিতল ভবনের বিভিন্ন অংশে বসেছে ছোট-বড় ৬০টি মৌচাক। ভবনের সামনে বেশ কয়েকটি গাছেও ঝুলছে শতাধিক মৌচাক। ভবনের পেছনে ও পশ্চিম পাশের গাছগুলোতে রয়েছে আরও শতাধিক মৌচাক। এসব মৌচাকের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। মৌমাছির ভয়ে বিদ্যালয়টির সামনের পথ দিয়ে চলাচল বন্ধ করেছে স্থানীয় ও শিক্ষার্থীরা।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় এবং বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন মৌমাছি কোনো না কোনো মানুষকে তাড়া করে, হুল ফোটায় । এই কারণে সবাই আতংকে থাকি। শুধু বিদ্যালয়েই নয় গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতেও বসেছে একাধিক চাক। সব মিলিয়ে ৬ শতাধিক মৌচাক রয়েছে এলাকাটিতে।
স্থানীয়রা জানান, চরাঞ্চলের ওই এলাকাটিতে এই সময় ব্যাপক সরিষার চাষ হয়। এই সরিষার মধু সংগ্রহ করতেই প্রতি বছর নভেম্বর মাসে এখানে মৌমাছির আগমন ঘটে। আশেপাশে বন জঙ্গল না থাকায় এই বিদ্যালয় এবং পাশের গাছগাছালিতে মৌচাক তৈরি করে মৌমাছিরা। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মৌচাকের সংখ্যা অনেক বেশি।
বিজ্ঞাপন
বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, অসংখ্য মৌমাছি সবসময় উড়াউড়ি করে। এসব মৌমাছি অনেক সময় হুল ফুটিয়ে দেয়। ভয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা বন্ধ করেছে। আমারও স্কুলে আসতে ভয় লাগে।
স্কুলটির পিয়ন সোহেল রানা জানান, প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে স্কুলের ক্লাসরুম খুলি। অন্য সময় অফিসের জানালা দরজা বন্ধ করে ভেতরে থাকি। স্কুলের বারান্দা এবং অফিসের সঙ্গেও মৌমাছি চাক দিয়েছে। মাঝে মধ্যে ধোঁয়া দিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মিন্টু চন্দ্র সেন জানান, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মৌমাছির উপদ্রব সহ্য করতে হয়। এবার মৌচাকের সংখ্যা অনেক বেশি। বিদ্যালয় ভবন এবং আশপাশের গাছ মিলে তিন থেকে সাড়ে তিনশ মৌচাক বসেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান জানান, এবার সরিষার চাষ বেশি হওয়ায় মৌমাছির চাকের সংখ্যাও বেড়েছে। শুধু স্কুলেই নয় আশেপাশের অনেক বাড়িতেও মৌমাছির চাক হয়েছে। এমনকি আমার বাড়িতেও ৬টি চাক হয়েছে। সব মিলে এলাকাটিতে ৫ থেকে ৬শ চাক রয়েছে। এসব চাক থেকে স্থানীয়রা মধু সংগ্রহ করলেও ক্ষতির পরিমানই বেশি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, সরিষার চাষ বেড়ে যাওয়ায় মৌমাছি আসছে ওই অঞ্চলে। চাক তৈরি করছে। সেসব চাক থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা। এটা একটা ভালো দিক যা স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
জুয়েল রানা/আরকে