গ্রীষ্মকালে সুপেয় পানির সংকট দূর করতে রাজবাড়ীতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৬টি পুকুর পুনঃখনন প্রকল্পের কাজ শেষ হতে না হতেই অযত্ন, অবহেলা ও তদারকির অভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে পুকুরের পানি। ১ কোটি ৮৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪৬২ টাকা ব্যয়ে পুকুরগুলোর এই পুনঃখনন কাজ শেষ হয় ২০২১ সালে। কিন্তু সঠিক তদারকির অভাবে প্রকল্পটি কাজে আসছে না জনগণের।

জানা গেছে, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল জব্বার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পুকুরগুলো লিজ প্রদান করে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর একদিনের জন্যও প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক এই প্রকল্পটি কোনো কাজে আসেনি। এসব পুকুরে করা হচ্ছে মাছ চাষ। বেশ কয়েকটি পুকুর অযত্ন-অবহেলা ও তদারকির অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে।

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গ্রীষ্মকালে সুপেয় পানির সংকট দূর করতে ১৬টি পুকুর পুনঃখননের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রাজবাড়ীতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তিনটি প্যাকেজে ২০২১ সালে কাজ শেষ করে বিভিন্ন ঠিকাদার। ১৬টি পুকুর পুনঃখননে ব্যয় হয় মোট ১ কোটি ৮৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪৬২ টাকা। খননের পর পুকুরগুলো জেলা পরিষদকে বুঝিয়ে দেই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। পরে জেলা পরিষদ বিভিন্ন ব্যক্তিকে এসব পুকুর লিজ প্রদান করে। জেলার শহীদ ওহাবপুর, খানখানাপুর, মিজানপুর, বসন্তপুর, মূলঘর, দাদশী, পাট্টা, মদাপুর, জামালপুর, জঙ্গল ও নবাবপুর ইউনিয়নের পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি পুকুরের গভীরতা হবে ৫ থেকে ৭ মিটার। চারপাশে কাঁটাতারের বেড়ার পাশাপাশি পুকুরের অপব্যবহার রোধে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করতে হবে। সেখানে একটি ফটক থাকবে। চারপাশে হাঁটার জন্য থাকবে ইটের রাস্তা। পুকুর পাড় রক্ষার জন্য থাকবে বেষ্টনী। পুকুরগুলো জেলা পরিষদের হওয়ার কারণে জেলা পরিষদের সদস্যের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদারকি টিম থাকবে। পুকুরের পানি সুপেয় রাখতে মাছ চাষ ও গৃহস্থলির কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সরেজমিনে বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের তুলসীবরাটে অবস্থিত পুনঃখননকৃত পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, পুকুর পাড় রক্ষার জন্য দেওয়া  বেষ্টনী ভেঙে গেছে। ১২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালে পুকুরটি পুনঃখনন করা হয়। সেই পুকুরের পানিতে ভাসছে কচুরিপানা। এ বছর পুকুরে পাট পচানোর কারণে কচুরিপানার স্তুপে পচন ধরেছে। সেখানে মুরগি বিভিন্ন খাবার খাচ্ছে। পানিতে মিশছে মুরগির বর্জ্য। 

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের রষোড়া গ্রামে ১২ লাখ ৪০ হাজার ব্যয়ে পুকুর পুনঃখনন করা হয় ২০১৯ সালে। স্থানীয়দের সুপেয় পানির জন্য পুকুর পুনঃখনন করা হলেও কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে করা জেলা পরিষদ থেকে লিজ প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় আব্দুল হামিদ শেখ (রিপন) বলেন, আমরা জেলা পরিষদ থেকে লিজ নিয়ে পুকুরে মাছ চাষ করছি। তবে তিনি কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।

মূলঘর ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা সুরুজ মিঞা বলেন, রাজবাড়ীতে পুনঃখননকৃত এসব পুকুর থেকে কোন সুবিধা পায়নি স্থানীয়রা। প্রতিটি পুকুর শুধুমাত্র পুনঃখননে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এসব পুকুর পুনঃখননে এত টাকা ব্যয় করা ঠিক হয়নি।

জামালপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সুধির বিশ্বাস বলেন, আমি তো জানি না এসব পুকুরে গৃহস্থলির কাজ করা নিষেধ। আমরা এখানে অবাধে সব ধরনের কাজ করি। এবার পুকুরে পাট পর্যন্ত জাগ দেওয়া হয়েছে। এই পুকুরের পানি সুপেয় হবে এটা কোনদিন এই অঞ্চলের মানুষ বিশ্বাস করবে না।

রাজবাড়ীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী নাদিয়া ফেরদৌসী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ ছিল ১৬টি পুকুর পুনঃখনন। এসব পুকুর থেকে গ্রামের মানুষ সুপেয় পানি পান করবে। আমরা ১৬টি পুকুর পুনঃখনন করে জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করেছি।

রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম শফিকুল মোরশেদ আরুজ বলেন,আমি কিছুদিন আগে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। এই পুকুরগুলো কাকে, কীভাবে লিজ দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে আমি জানি না। আগে যে চেয়ারম্যান ছিল সে থাকাকালীন এই পুকুরগুলো লিজ দেওয়া হয়। তবে আমি বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখব।

মীর সামসুজ্জামান/আরকে