সিলেটে স্বামীর ঘরে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন গৃহবধূরা। এক সপ্তাহে স্বামীর হাতে তিন গৃহবধূ খুনের ঘটনায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গৃহবধূর প্রতি সহিংসতার একটি ঘটনা অতীতের অন্য ঘটনাকে হার মানাচ্ছে। সর্বশেষ ইনজেকশন দিয়ে এক গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে। এতে করে সিলেটে পারিবারিক কলহের চিত্রটি সবার সামনে ফুটে উঠছে।

পুলিশের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সিলেট নগরের খাদিমনগর চা-বাগান এলাকায় ইনজেকশন দিয়ে সুফিয়া বেগম নামের এক গৃহবধূকে হত্যা করেছেন তার স্বামী।

এর আগে বৃস্পতিবার (৪ মার্চ) স্ত্রীকে হত্যা করে থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন সাহিদ আহমদ (২৮) নামের এক যুবক। পারিবারিক কলহের জেরে তার স্ত্রী লাকি আক্তারকে (২৭) কিলঘুষি দিয়ে মেরে ফেলেন তিনি। পরবর্তীতে আত্মসমর্পণ করে তিনি পুলিশের কাছে বিষয়টি স্বীকারও করেছেন।

বুধবার (৩ মার্চ) সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘায় পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী দানা মিয়ার (৩৪) ছুরিকাঘাতে খুন হন স্ত্রী লাকী বেগম (২৩)।

পুলিশ জানায়, এই তিন খুনের ঘটনায় জড়িত তিন স্বামীকেই আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন শুধু নিজে থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেছেন। বর্তমানে গৃহবধূ খুনের ঘটনায় আটক তিনজন কারাগারে রয়েছেন।

এদিকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতে, করোনাকাল থেকে সিলেটে খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। এসব কারণে সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে। তারা বলছেন, সঠিক সময়ে বিচার না হওয়া, নির্ভুল অভিযোগপত্র ও সুশসানের অভাবের কারণেই এসব ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‌‘বর্তমানে সুশাসন এখন খাঁচায় বন্দি। দেশে এসব সহিংসতার একমাত্র কারণ হচ্ছে বিচারহীনতার অভাব। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার হলে সমাজে এসব ঘটনা কমে যেত।’

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ লালা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গৃহবধূ খুনের ঘটনার বা নির্যাতনের শিকারের বিষয়গুলো পারিবারিক কলহের জের ধরেই শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এসব কলহ বাড়ার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া স্বামীদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা দায়ী।’

পারিবারিক কাউন্সিলিং ও ধর্মীয় অনুশাসন মানার মধ্য দিয়ে এসব কলহ দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন এই আইনজীবী। তিনি আরও বলেন, ‘একটি সমস্যা রয়েছে যেটি দূর করা কষ্টসাধ্য। সেটি হলো যারা বিদেশে থাকেন। চার-পাঁচ বছর পর এসে বিয়ে করে বিদেশে চলে যান। এসব ক্ষেত্রে আরও বেশি কলহ বেড়ে যায়। তবে এই ক্ষেত্রে পরিবারের কাউন্সিলিং পারে কলহ দূর করতে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) সিলেট অঞ্চলের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তার মনে করেন, ‘সুবিচারের অনুপস্থিতিই এসব ঘটনার মূল কারণ। যেকোনো ধরনের অপরাধ অপরাধই। পারিবারিক কলহের কারণে আমাদের নৈতিকতার যে অবক্ষয় হচ্ছে তার জেরেই গৃহবধূ খুনের মতো ঘটনা ঘটছে।’

সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড ক্রাইম অ্যানালাইসিস) জেদান আল মূসা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের পারিবারিক বন্ধনটা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। যার কারণেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বাড়ছে পারিবারিক কলহ। এসব থেকেই খুনের ঘটনাগুলো ঘটছে।’

তুহিন আহমদ/এমএসআর