যেখানে এখনও পৌঁছায়নি শিক্ষার আলো
কোনো স্কুল না থাকায় চর কুশাহাটার শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে
চর কুশাহাটা। নামটি শুনলেই মনে হচ্ছে দুর্গম কোনো জায়গা। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ৭ কি.মি. দূরে পদ্মা নদীর মাঝে জেগে ওঠা চর। বিচ্ছিন্ন এ চরে দেড়শ থেকে দুইশ পরিবারের বসবাস। সেখানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা বা ট্রলার। নেই কোনো হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমনকি বিদ্যুতের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত এখানকার মানুষ। রাত এলেই অন্ধকারে তলিয়ে যায় এলাকা।
চর কুশাহাটার রেশমা খাতুন (১০)। পরিবারের ছোট মেয়ে। পরিবারে অভাব থাকলেও লেখাপড়া করার প্রতি তার তীব্র ঝোঁক। আর এ ঝোঁকের কারণেই বড় বোনের বাড়িতে থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। কিন্তু বিধি বাম। পারিবারিক সমস্যার কারণে ফিরে আসতে হয় নিজের বাড়িতে।
বিজ্ঞাপন
বাড়িতে ফিরে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। এখন সংসারের কাজকর্ম করেই দিন কাটছে। শুধু রেশমা নয়, তার মতো আম্বিয়া, রহিমা, আকিবদেরও একই অবস্থা। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যেতে পারছে না স্কুলে। কারণে তাদের চরে নেই কোনো স্কুল। ফলে স্কুলের অভাবে শিশুরা দিন দিন নিরক্ষর জনগাষ্ঠীতে পরিণত হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত এই চরের মানুষ। অত্যন্ত দরিদ্র এই পরিবারগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশনসহ সকল নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পরা চরবাসীর মধ্যে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এখনও। দুর্গম চর হওয়ার কারণে এখানে পৌঁছায়নি রাষ্ট্রের কোনো সুযোগ-সুবিধা। আর তাইতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অসুস্থ হলে মৃত্যু ছাড়া নেই কোনো উপায়। নেই শিশুদের জন্য সুস্বাস্থ্য ও সুশিক্ষার কোনো ব্যবস্থা। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ২০ বছর আগে কুশাহাটা এলাকাটি পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। তখন কুশাহাটার এ পরিবারগুলো মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার কানাইদিয়ার চরে বসতি স্থাপন করে। একসময় তাদের সেখানে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৩ সালে কানাইদিয়ার চরে ফের নদী ভাঙন দেখা দেয়। অন্যদিকে জেগে ওঠে কুশাহাটা চর। এ পরিবারগুলো কানাইদিয়া চর থেকে আবার ফিরে এসে বসতি স্থাপন করে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের কুশাহাটা চরে।
কৃষি কাজ ও মাছ ধরা এখানকার মানুষের অন্যতম পেশা। নেই কোনো বাজার। বেচাকেনা ও কেনাকাটা করতে যেতে হয় মানিকগঞ্জের আরিচা, পাবনার কাজিরহাট আর নিজ ইউনিয়নের দৌলতদিয়া বাজারে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় ফসলের ন্যায্য দাম যেমন পায় না তেমনি কেনাকাটায় ব্যয় করতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। এভাবেই ঝড়-বৃষ্টি ও নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করেই চলছে তাদের জীবন-জীবিকা।
স্থানীয়রা জানান, এই দ্বীপে বসবাস করা সহস্রাধিক মানুষ দেশের নাগরিক হলেও বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক অধিকার থেকে। শিক্ষার অভাবে শিশুরা দিন দিন নিরক্ষর জনগোষ্ঠীতে পরিণত হচ্ছে। হাসপাতাল না থাকায় বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে হচ্ছে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব সেখানে একটি স্কুল এবং একটি কমিউনিটি ক্লিনিক করার পরিকল্পনা আছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সারোয়ার আহমেদ সালেহীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে আমাদের সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলব। যত দ্রুত সম্ভব কুশাহাটা চরের মানুষের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হবে।
মীর সামসুজ্জামান/এসপি